সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে আমরণ অনশনে বসা ৩৫ প্রত্যাশী আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আন্দোলনকারীরা জানান, অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে কিচিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে এ পর্যন্ত সরকারের কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে দেখা যায়, ৩৫ প্রত্যাশীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। সোমবার রাত থেকে ৩৫ প্রত্যাশীরা আমরণ অনশনে বসেছেন। কেউ অনশনে বসে অসুস্থ হয়ে স্যালাইন লাগিয়েছেন।
চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করা নিয়ে আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক এমএ আলী বলেন, 'আমাদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি বারবার বলা হচ্ছে দ্রম্নত প্রজ্ঞাপন জারি করে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলছে যে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন না। সোমবার এবং আজ পর্যন্ত সরকারের ঊর্ধ্বতন কেউ আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি।'
তিনি বলেন, 'যতক্ষণ প্রজ্ঞাপন জারি করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে। এতদিন আমরা শুধু শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ছিলাম। গতকাল থেকে আমাদের অনশন শুরু হয়েছে।
অনশন করা অবস্থায় চার থেকে পাঁচজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান আলী।
সরকারি চাকরিপ্রত্যাশীদের দাবি, প্রতিযোগিতার এ সময় অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিতে ৩০ পেরিয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটের কারণে বয়সমীমা একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে আসে। এতে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এতে অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
জানা যায়, চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করা নিয়ে আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন শেষে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে অনশন কর্মসূচি। রাতভর শাহবাগে জাদুঘরের সামনে অবস্থান করেন তারা।
আন্দোলনকারীরা বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর আমরা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের দাবি না মেনে কালবিলম্ব করা হচ্ছে। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত কমিটি বয়স বাড়ানোর সুপারিশ করলেও এখনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি সরকার। আমরা আর বিলম্ব চাই না, আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চাই। আমরা চাই আজকের মধ্যে দাবি মেনে যেন প্রজ্ঞাপন জারি হোক।
৩৫ প্রত্যাশী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রোমান কবির বলেন, 'প্রজ্ঞাপন দাবিতে আমাদের আমরণ অনশন কর্মসূচি চলমান থাকবে। বর্তমানে ১৮-২০ জন ৩৫ প্রত্যাশী অনশনে রয়েছে। এ ছাড়া অসুস্থ ৮ থেকে ১০ জন অসুস্থ। আমাদের দাবি একটাই- ৩৫ বাস্তবায়নে প্রজ্ঞাপন। রাষ্ট্রীয় পক্ষ থেকে সমাধান না এলে আমৃতু্য অনশন চলমান থাকবে।'
এর আগে গত শনিবার বিকাল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য একদিন সময় বেঁধে দেয় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা নূ্যনতম ৩৫ বা শর্ত সাপেক্ষে উন্মুক্ত প্রত্যাশী চাকরিপ্রার্থীরা। এ সময় রোববারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন না হলে সোমবার সকাল ১১টায় কঠোর কর্মসূচি নিয়ে ফের রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দেন তারা। সোমবার সকাল ১১টা থেকে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে নামেন তারা এবং রাত থেকে শুরু করেন আমরণ অনশন কর্মসূচি।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা এখন ৩০ বছর। বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে আন্দোলনকারীরা। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সেই দাবি একাধিকবার নাকচ করে দেয়। শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠিত হলে সেই দাবি ফের জোরালো হলে ৩০ সেপ্টেম্বর কমিটি গঠন করে অন্তর্র্বর্তী সরকার। এই কমিটি সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ যৌক্তিক বলে দাবি করেন।
কমিটি প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এর আগে সাংবাদিকদের বলেন, 'মেয়েদের জন্য আলাদা করে বেশি বয়স দেওয়া হয়েছে। এটা আমরা এ কারণে দিয়েছি যে ছেলেদের মতো ওই বয়সে মেয়েদের পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফ্যামিলি অববিগেশনস থাকে, বিয়ে হয়ে যায়, বাচ্চাকাচ্চা হয়। তাই তারা যেন আসতে পারেন। এ ছাড়া আমাদের নারী কর্মকর্তার সংখ্যা তুলনামূলক কম। কোটা আছে, কিন্তু অতটা ফুলফিল হয় না এখনো। সেজন্য আমরা এ সুপারিশ দিয়েছি, যেন নারীরা এ সুবিধাটা পান, তারা আসতে পারেন।'
বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য স্বশাসিত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক আইন, সংবিধি ও বিধিবিধান রয়েছে। তাই সর্বজনীন বিধান করার উদ্দেশ্যে 'সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফিন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোয় চাকরির যেসব পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর উলেস্নখ রয়েছে, সেখানে ৩০-এর পরিবর্তে ৩৫ বছর করতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪' শীর্ষক অধ্যাদেশের খসড়া তারা প্রস্তুত করেন বলে কমিটি প্রধান উলেস্নখ করেন।