বন্ধ ঘোষিত পোশাক কারখানা চালু ও বকেয়া বেতনের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো মঙ্গলবার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার একটি কারখানার শ্রমিকেরা। নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল মোড়ে এ বিক্ষোভ করেন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকেরা। ৩৪ ঘণ্টার এই অবরোধে সড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় ব্যস্ততম এই সড়ক ব্যবহারকারী যাত্রী ও যানবাহন চালকদের।
জানা যায়, সোমবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে মঙ্গলবার সকালে আরও শ্রমিক যোগ দেন। সোমবার রাতেও শ্রমিকেরা সড়কে ছিলেন। এ প্রতিবেদন লেখার সময় (রাত ৮টা) পর্যন্ত শ্রমিকদের অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত ছিল।
আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা জানান, এক মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রেখে দুই মাস আগে ওই কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। টানা তিন মাস তারা বেতন-ভাতা না পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন।
এদিকে, শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধের জেরে বাইপাইল মোড় থেকে আবদুলস্নাহপুর ১
সড়কটিতেও যান চলাচল বন্ধ থাকে। অবরোধ চলমান থাকায় নবীনগর-চন্দ্রা-আব্দুলস্নাপুর মহাসড়কের জামগড়া, জিরাবো, পলাশবাড়ি, বাইপাইল, ইপিজেড এলাকাসহ পুরো আশুলিয়ায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে এসব এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রায় অচল অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ পথে চলাচল করা সাধারণ মানুষ এবং যানবাহন সংশ্লিষ্টরা। গাড়ি নিয়ে তারা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা জানেন না কখন এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবেন।
ঘটনাস্থলে থাকা আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১, সেনাবাহিনী, আশুলিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা জানান, তারা শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানালেও শ্রমিকেরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
নেক্সট ফ্যাশনের একজন পুরুষ শ্রমিক বলেন, 'বেতন পরিশোধের জন্য আমাদের ছয়বার সময় দিয়েছে। বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয়, সচিবালয় সব জায়গায় গেছি। মালিকপক্ষ বলেছিল ১৭ অক্টোবর না হলে ২০ অক্টোবর লাঞ্চের পরে বেতন দেওয়া হবে। কিন্তু বেতন দেয়নি। আমরা এরপরও সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। অবশেষে রাস্তা অবরোধ করেছি।'
আরেক নারী শ্রমিক বলেন, 'তিন মাস ধরে বেতন পাই না। অন্য কোথাও চাকরি পাচ্ছি না। রুম ভাড়া দিতে পারি না, বাচ্চার স্কুলের বেতন দিতে পারি না। দোকানের বাকির টাকা দিতে পারি না। মালিক কোনো কথা বলছেন না। বেতন না পেলে কীভাবে চলব।'
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী বলেন, 'সোমবার থেকে বকেয়া বেতন ও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।'
ওসি আইয়ুব আলী বলেন, 'নবীনগর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী গাড়ি সোমবার রাত থেকে কোনাবাড়ী, ধামরাই, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো ব্যবহার করছে।'
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, 'শ্রমিকরা আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে আবারও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।'
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, 'জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন কারখানাটি ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিক মিলে সাতজন মালিক। কারখানাটিতে প্রায় চার হাজার শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের জন্য বিজিএমইএর সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করেও কোনো সুরাহা হয়নি। এই মালিকদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ঠিকই চলছে শুধু এই কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া দিচ্ছে না।'
শ্রমিকেরা জানান, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আশুলিয়ার ইয়ারপুরে অবস্থিত জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি অংশ ভারতে চলে যান। এরপর আর্থিক সংকট ও রপ্তানি আদেশ কমতে থাকায় সংকটে পড়ে কারখানাটি। অনিয়মিত হয়ে পড়ে বেতন-ভাতা। পরে ১৪ সেপ্টেম্বর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ লাগিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, 'কারখানার কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হচ্ছে। আশা করছি, দ্রম্নতই সমাধান হয়ে যাবে।'
সারোয়ার আলম আরও বলেন, 'বিষয়টি বিজিএমইএ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রম মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।'