শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

অন্তর্র্বর্তী সরকার জাতিকে নিরাশ করবে না :সড়ক উপদেষ্টা

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অন্তর্র্বর্তী সরকার জাতিকে নিরাশ করবে না :সড়ক উপদেষ্টা

অন্তর্র্বর্তী সরকার জাতিকে নিরাশ করবে না বলে মন্তব্য করে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, তারা ব্যর্থ হলেও আগামী প্রজন্ম নিরাপদ সড়ক উপহার দিতে ব্যর্থ হবে না।

মঙ্গলবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সড়ক উপদেষ্টা বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে যখন একটি স্বৈরাচারী সরকার ছিল, তখন তিনি অন্তত মনে করেছিলেন, এর শেষ দেখে যেতে পারবেন না। কিন্তু জুলাই-আগস্টের গণ-অভু্যত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে, স্বৈরাচারেরও পতন সম্ভব।'

এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, 'আমরা ব্যর্থ হলেও আমাদের আগামী প্রজন্ম নিরাপদ সড়ক উপহার দিতে ব্যর্থ হবে না।' মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, 'আমরা জাতি হিসেবে একটি সন্ধিক্ষণে আছি। সন্ধিক্ষণ বলার কারণ হচ্ছে, একটি সময় থেকে অন্য আরেকটি সময় উত্তরণের বেগে আছি। আমরা মনে করি, আমাদের প্রজন্ম অনেক কিছুতে ব্যর্থ হয়েছে। এর বড় দৃষ্টান্ত সড়কের নূ্যনতম নিরাপত্তাব্যবস্থা করতে না পারা। কিন্তু ২০১৮ সালে আমাদের ছাত্ররাই তাদের আত্মদানের মাধ্যমে ও সড়ক নিয়ন্ত্রণ করে দেখিয়ে দিয়েছে, আসলে কাজটা কীভাবে করা উচিত। সে সময় সড়কে যারা যাতায়াত করেছেন, তারা সবাই অনুভব করেছেন, সড়কের শৃঙ্খলা তো এমনই হওয়া উচিত। তখন দুর্ঘটনাও উলেস্নখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা সেটা ধরে রাখতে পারিনি।'

সড়ক দুর্ঘটনাকে কেবল পরিসংখ্যানের মাধ্যমে তুলনা না করে মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা যে কিছু করিনি বা করতে চেষ্টা করছি না, এমন নয়। আমরা প্রথম যে পরিবর্তনটা করতে চাইছি, সড়কের দুর্ঘটনা এখন আর আমাদের কাছে কোনো পরিসংখ্যান নয়। আমরা এটিকে এখন আর পরিসংখ্যান হিসেবে দেখছি না। আমরা এটাকে একটি মানবিক বিষয় হিসেবে দেখছি। আমরা দেখছি যে সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ব্যক্তি কারও সন্তান, কারও বাবা, কারও ভাই। এর মাধ্যমে একটি সম্ভাবনারও মৃতু্য হয়।'

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, '৯ অক্টোবর ফেসবুকে দেখি বাড্ডাতে একটি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। সেই দুর্ঘটনায় একজন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী তাসনিম জাহান মারা যান এবং তার বোন আহত হন। তখনই আমি আমার সচিবকে বলি ওই পরিবারের খোঁজখবর নিতে। এরপর আমি নিহত তাসনিমের বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলি। আমাদের ব্যর্থতা ও অক্ষমতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।'

সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জানান, শুধু এটুকুতেই তারা থেমে থাকেননি। তারা দুর্ঘটনায় যুক্ত বাসটির রোড পারমিট বাতিল করেছেন। সেই বাসের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করেছেন। বাসটির ফিটনেস যিনি অনুমোদন করেছেন, তার বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। চালকের লাইসেন্সও স্থগিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় যে মামলা হয়েছে, সেটি চলমান হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক আইনের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ নিহতের পরিবারকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সাবেক নৌপরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খান অযোগ্য ২৫ হাজার মানুষের তালিকা দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেয়েছিলেন বলে অনুষ্ঠানে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ''২০০৩ বা ২০০৪ সালের দিকে সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক একটি বৈঠকে তিনি ছিলেন। সেখানে একজন বিশেষ ব্যক্তি ছিলেন। তিনিও একমত হলেন, সড়ক নিরাপদ করতে হবে। ড্রাইভারদের খুব ভালো মানের ড্রাইভার হতে হবে। এরপর তিনি (মোহাম্মদ আবদুল মোমেন) যখন বিআরটিএর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান, তখন সেই ভদ্রলোক ২৫ হাজার চালকের একটি তালিকা নিয়ে এসে বললেন, 'এদের সবাইকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে।' তার নাম শাজাহান খান।"

মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, "শাজাহান খান শেষ হয়ে গেছেন, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। শাজাহান খান এখনো আছেন। তিনি শুধু একটি নাম হিসেবে শাজাহান খান বললেন, যারা অযোগ্য মানুষকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে যান। শাজাহান খান বলেছিলেন, 'রাস্তায় ড্রাইভার যদি গরু আর বলদ চেনে, তাহলেই হবে। মানুষ চেনার কোনো দরকার নাই।' এটা যদি একজন সড়ক খাতের নেতার বক্তব্য হয়, শেষ পর্যন্ত পরিণতি কী, সেটা তারা অনুমান করতে পারেন।"

জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের ছাত্ররা পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা কাজ করে অর্থ উপার্জন করবে বা কিছু কাজ করে মা-বাবার বোঝা লাঘব করবে, সেই সুযোগটা নেই। আমরা চেষ্টা করছি ট্রাফিক দিয়ে শুরু করতে। আমরা ৩০০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সড়ক নিরাপত্তার কাজে আনতে চাই। এতে অন্তত সড়কটা নিরাপদ হোক এবং তারা কিছু পয়সা উপার্জন করুক। এতে তারা নিজেদের আংশিক খরচ নিজেরা মেটাতে পারবে।'

সভাপতির বক্তব্যে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক 'সবাই মিলে নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলব' এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাসচাপায় নিহত তাসনিমের পরিবারকে

৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ

রাজধানীর বাড্ডায় ৯ অক্টোবর রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসচাপায় নিহত তাসনিম জাহানের পরিবারকে ৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ। এর মধ্যে তাসনিম জাহানের জন্য ক্ষতিপূরণ ৫ লাখ টাকা। ওই ঘটনার সময় আহত হওয়া তার বড় বোন নুসরাত জাহানের চিকিৎসার জন্য এক লাখ টাকা।

অনুষ্ঠানে এই টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় তাসনিম জাহানের বাবা সাইফুল আলমের হাতে।

সাইফুল আলম তার মেয়ের কথা স্মরণ করে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, 'আমি দাবি করছি, দ্বিতীয়বার স্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকার এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করুক, যাতে আমার মতো কোনো হতভাগ্য বাবাকে আর সন্তান হারাতে না হয়। নিরাপদ সড়ক যাতে হয়। কোনো তাসনিমের প্রাণ যেন ঝরে না যায়, কোনো তাসনিমের মা-বাবা যেন নিঃস্ব হয়ে না যায়। আমরা এই সরকারের কাছে দাবি করছি, আমরা যেন নিরাপদ সড়ক পাই। আমরা যেন সুন্দরভাবে বাংলাদেশকে গড়তে পারি। আমার তাসনিমের জন্য আপনারা দোয়া করবেন।'

ক্ষতিপূরণ হস্তান্তরের আগে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, 'মৃতু্যর কোনো প্রতিদান হয় না, জীবন অমূল্য। এটা আমরা কেউ দিতে পারব না। কিন্তু আজকে আমরা যে অর্থটা তাসনিম ও নুসরাতের বাবার হাতে তুলে দেব, সেটা কেবল আমাদের ব্যর্থতার দায় স্বীকারের জন্য দেব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে