শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

শেখ হাসিনার পদত্যাগ প্রসঙ্গ পত্রিকায় আনা 'সন্দেহজনক'

ব্যবস্থা চান বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান -ফোকাস বাংলা

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে পদত্যাগ করেছেন কিনা, আড়াই মাস পর সে প্রসঙ্গ পত্রিকায় আনা 'সন্দেহজনক' বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

এই বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিতেও অন্তর্র্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বিএনপির এক যুগের শরিক ও পরে আওয়ামী লীগ বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মঙ্গলবার রাজধানীতে এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'একজন শাসক যখন পালিয়ে যান, তখন আর উনি পদত্যাগ করলেন কি করলেন না, তাতে কিছু আসে যায় না। যে পালিয়ে যায় তার পদত্যাগ করা বা না করায় কী আসে যায়? তিনি পলাতক। এ নিয়ে প্রসঙ্গটা পত্রিকায় তোলাটা সন্দেহজনক। এটা একটা দুশ্চিন্তার বিষয় যে, কেন হচ্ছে এটা। এটা সরকারের দায়িত্ব খোঁজ নেওয়া এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।'

তুমুল গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে উড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিএনপি, সে সময়ের নিষিদ্ধ জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম এবং আরও কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা দেশত্যাগের আগে পদত্যাগ করেছেন। সেই রাতেই জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনও বলেন, তিনি পদত্যাগপত্র পেয়েছেন। তিন দিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্র্বর্তী সরকার।

কয়েকদিন পর শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, তার মা পদত্যাগের সুযোগ পাননি। পরে ফাঁস হওয়া টেলিফোনালাপেও শেখ হাসিনাকে একই কথা বলতে শোনা যায়।

এরই মধ্যে শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত জুলাই ও আগস্টে সংঘাতে প্রাণহানিকে 'গণহত্যা' ধরে এই বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন 'জনতার চোখ' এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন 'উনি তো কিছুই বলে গেলেন না...' পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর লেখা প্রকাশিত হয় ১৯ অক্টোবর।

সেখানে মানবজমিন সম্পাদক লিখেছেন, 'প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করে থাকেন তাহলে সেটা গেল কোথায়? কারও কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই। 'তিন সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছি। খোঁজ নিয়েছি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও। যেখানটায় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র থাকার কথা। কোথাও নেই।'

শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির মুখোমুখি হন মতিউর রহমান চৌধুরী। তিনি প্রশ্ন রাখেন, 'আপনার কাছে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে?'

রাষ্ট্রপতি তাকে বলেন, 'আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।'

এই প্রসঙ্গটি পত্রিকায় ছাড়া হওয়ার পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেছেন, 'অসত্য' বক্তব্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন। সংবিধানে তাকে অপসারণের সুযোগ আছে, এই কথাটিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সরকার পতন আন্দোলনের ডাক দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। বঙ্গভবনের সামনে গিয়ে জমায়েত কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। একটি পক্ষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এবং অপর একটি পক্ষ এক সপ্তাহের মধ্যে পদ থেকে সরে যাওয়ার দাবি করেছে।

৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন নজরুল ইসলাম খান ছিলেন কারাগারে। সেখানে বসেই এই খবর কীভাবে জেনেছেন, সেটি লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তুলে ধরেন তিনি।

'রাষ্ট্রপতির সেই বক্তব্যের পর আর কথা থাকে না'

বিএনপি নেতা বলেন, 'জেলখানায় যেটা ডিভিশন ওয়ার্ড ওইটার নাম 'চম্পাকলি'। একটা রুমের সামনে একজন সাবেক কর্মকর্তা তিনি অনুমতি নিয়ে একটি টেলিভিশন রেখেছেন যেটাতে শুধু বিটিভি দেখা যায়। আমরা ওখানে বসে দেখলাম যে, আমাদের যিনি রাষ্ট্রপতি তিনি তার পাশে তিন বাহিনী প্রধানকে নিয়ে বলছেন যে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতি নিজে যখন জাতির সামনে জাতির উদ্দেশে তিন বাহিনীর প্রধানকে পাশে দাঁড় করিয়ে বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন, তারপরে এ নিয়ে কোনো কথা থাকে না।

শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া একটি টেলিফোনালাপ শুনেছেন জানিয়ে নজরুল বলেন, উনি বলছেন যে, 'যেভাবে পদত্যাগ করার কথা, আমি ওইভাবে পদত্যাগ করি নাই', তার মানে পদত্যাগ করেছেন তিনি। যেভাবে করার কথা ওইভাবে করেন নাই। তাহলে পদত্যাগ না করার আর তো প্রশ্ন থাকছে না, পদত্যাগ তো হয়েছে।'

'বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে'

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইচ্ছা করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলেও সতর্ক করেন বিএনপি নেতা। বলেন, 'আমরা জানি বহু বাস-ট্রাকের মালিক আছে যারা অসন্তুষ্ট হয়েছে পরিবর্তনে। যেকোনো একটা রাস্তায় একটা বাস বা ট্রাক কাত করে রেখে দিলেই একটা বড় যানজট সৃষ্টি হতে পারে, জনগণ অসন্তুষ্ট হবে তাতে। আমাদের সেজন্য খেয়াল রাখতে হবে।'

দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলেও সবাই মিলে তা 'প্রতিরোধ করা গেছে' মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আলহামদুলিলস্নাহ।'

ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, তারা স্থায়ী বা অস্থায়ী এটা কোনো কথা নয়, তাদের দায়িত্ব হলো জনগণের স্বস্তি নিশ্চিত করা।'

ক্ষমতায় নাই বলে আওয়ামী লীগের লোকদের 'সমস্যা সৃষ্টি করার' সক্ষমতা নাই- এ কথা না ভাবার পরামর্শও দেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, 'নানাভাবে তারা সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু অন্যায় দমনের দায়িত্ব তো ফাইনালি সরকারের ওপর। সরকারের যতটা 'শক্তি থাকা দরকার' ততটা নেই। প্রশাসন বিশেষ করে পুলিশ তার পূর্ণাঙ্গ শক্তি সরকার প্রয়োগ করতে পারছে না।'

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুলস্নাহও বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে