'ট্রাফিক পক্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জনসম্পৃক্ততায় ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

বিশেষ প্রতিনিধি
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, 'ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে জনসম্পৃক্ততা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ছাত্র-জনতাসহ নগরে বসবাসকারী জনসাধারণকে সচেতন এবং সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ট্রাফিক শৃঙ্খলার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব।' সোমবারর দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের প্যারেড গ্রাউন্ডে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আয়োজিত 'ট্রাফিক পক্ষ-২০২৪'-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও বৈধ-অবৈধ যানবাহনের আধিক্যের কারণে রাজধানীর সড়কের শৃঙ্খলা ভেঙে অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে উলেস্নখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতাসহ নগরে বসবাসকারী জনসাধারণকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ট্রাফিক শৃঙ্খলা উন্নয়ন সম্ভব। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতাসহ নগরে বসবাসকারী জনসাধারণকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ট্রাফিক শৃঙ্খলা উন্নয়ন সম্ভব। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগর পুলিশ ১৫ দিনব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর ফলে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক বিভাগের কাজে যেমন গতি আসবে, তেমনি ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জনভোগান্তি কমে আসবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবকাঠামো বৃদ্ধি পেলেও পরিবহণ ব্যবস্থার সুশৃঙ্খল ও আধুনিকায়ন উলেস্নখযোগ্যভাবে হয়নি। শহরের জনগণের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক যানবাহন উলেস্নখযোগ্যভাবে দেওয়া সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি একই সড়কে রিকশা ঠেলাগাড়িসহ অসংখ্য অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করে। মানুষ তার প্রয়োজনে এসব যানবাহনের দ্বারস্ত হচ্ছে। ফলে ঢাকা মহানগরীতে সুশৃঙ্খল ও কাঠামোগত ট্রাফিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন কঠিনতর হচ্ছে। অপরদিকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও অস্থিরতার কারণে সড়কের শৃঙ্খলা ভেঙে যাচ্ছে। বৈধ-অবৈধ যানবাহনের আধিক্যের কারণে যানজটের আকার দিন দিন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর ঢাকা শহরসহ সারাদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। দেশের আপামর জনগণের কথা বিবেচনা করে ছাত্র-জনতা ভলান্টিয়ার বেশে কয়েকদিন সুশৃঙ্খলভাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে সড়ক ও পরিবহণের শৃঙ্খলা বজায় রাখে। বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতা ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজনের কায়িক শ্রম ও মূল্যবান পরামর্শে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ বেআইনি যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের চেষ্টা সত্ত্বেও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন আশানুরূপ হয়নি। ট্রাফিক সিগানাল দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে চালু করার জন্য একটি গবেষক দল কাজ করছে। আশা করি স্বল্প সময়ের মধ্যে এটা চালু হবে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করছে। শুধু সরকার কিংবা পুলিশের কাজ করার মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা আশানুরূপ উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন নগরীর প্রতিটি মানুষকে সম্পৃক্ত করা। রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে গাড়ির চালক ও ট্রাফিক পুলিশের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি নগরীর অধিবাসীদেরও ট্রাফিক আইন মেনে চলা একান্ত কর্তব্য। এবারের ট্রাফিক পক্ষ উদযাপনে ছাত্র-জনতা যোগ দিয়েছে জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, প্রথম অবস্থায় ৩০০ জন ছাত্র এই ট্রাফিক সপ্তাহে কাজ করবেন। পরে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হবে। এজন্য তাদের আমরা একটা সম্মানী দেব। এ সময় তিনি ডিএমপির ট্রাফিক পক্ষের সাফল্য কামনা করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ৫ আগস্টের গণ-অভু্যত্থানের পর সরকারের প্রতিটি অঙ্গকে সক্রিয় রাখতে তারুণ্যের শক্তি যে ভূমিকা রাখছে তা নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব। বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকার তারুণ্যের সে শক্তিকে কাজে লাগাতে চায়। তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কাজে লাগাতে অনুরোধ করেছিলাম, যা আজ বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান এনডিসি'র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা এবং জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ এনডিসি, পিএসসি (অব.), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম এনডিসি। এর আগে 'ট্রাফিক পক্ষ-২০২৪' উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের আয়োজনে একটি বর্ণাঢ্যর্ যালির আয়োজন করা হয়। এতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ আমন্ত্রিত অতিথি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।