মিরপুরে সাকিবের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল ধাওয়া, মারামারি

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর মিরপুরে রোববার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল চলাকালে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে -স্টার মেইল
'সাকিব আল হাসান ভয় নাই, মিরপুর ছাড়ি নাই', 'তুমি কে আমি কে, সাকিবিয়ান সাকিবিয়ান', গলা ফাটিয়ে এরকম নানা সেস্নাগান দিচ্ছিলেন এক দল লোক। আচমকা বাঁশ, লাঠি নিয়ে তাদের ওপর হামলা করলেন কয়েকজন লোক। আক্রমণের শিকার লোকগুলি দৌড়ে পালাতে লাগলেন স্টেডিয়ামের মূল ফটকের দিকে। কিন্তু সেখানে তাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লোকের চিৎকার, ছুটোছুটি, সেনাবাহিনীর বাঁশির শব্দ মিলিয়ে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো সেখানে। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের ১ নম্বর ফটকে সামনে রোববার দুপুরে এসব যখন চলছে, স্টেডিয়ামের ভেতরে তখন অনুশীলন করছে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। মিরপুরে সাকিবের বিদায়ী টেস্ট খেলতে চাওয়া এবং শেষ পর্যন্ত তার দেশে আসতে না পারা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা কর্মসূচি চলছে গত কয়েক দিন ধরেই। টেস্ট শুরুর আগের দিন স্টেডিয়ামমুখী 'সাকিবিয়ানদের লং মার্চ' কর্মসূচি ডেকেছিলেন সাকিবের ভক্ত-সমর্থকরা। মিরপুর স্টেডিয়ামের পাশেপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে গত কয়েক দিন থেকেই। রোববারও সকাল থেকে মিরপুর ২ নম্বর মোড় থেকেই অপরপ্রান্তে প্রশিকা মোড় এবং আরেকদিকে ন্যাশনাল বাংলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পর্যন্ত ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রেখেছিল পুলিশ। পাশাপাশি উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক সেনাবাহিনীর উপস্থিতিও ছিল শুক্রবার। দুপুর ২টা থেকে সাকিব ভক্তদের আনাগোনা দেখা যায় স্টেডিয়ামের সামনে। 'লং মার্চ' বলতে যেমন বোঝায়, তেমন বড় সংখ্যক কোনো উপস্থিতি সেখানে ছিল না। শ'খানেক সাকিব ভক্তকে দেখা যায় মিছিল করতে, সেস্নাগান দিতে। অনেকের হাতেই ছিল ব্যানার। তাদের ঘিরে সংবাদকর্মী ছিলেন বিপুল সংখ্যক। অন্যান্য দিনের মতোই তাদের সবকিছু চলছিল। একটা সময় তাদের মাঠে পাশ থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাধারণ মানুষ ও উৎসাহী অনেককে আশেপাশের গলিতে পাঠিয়ে দেন তারা। হঠাৎই সাকিবের ভক্তদের হামলায় বদলে যায় পুরো চিত্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাছাকাছি থাকলেও ওই সময়টায় তারা একরকম দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। আক্রান্তদের রক্ষা করতে গিয়ে কয়েকজন সংবাদকর্মীও আঘাতের শিকার হন। হামলাকারীরা সাকিব-বিরোধী নানা সেস্নাগান দিয়ে এক পর্যায়ে একটি গলি দিয়ে বের হয়ে যায়। সাকিব-ভক্তদের বিপদ আরও বেড়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিচার্জে। 'লাঠি কোথায়, লাঠি নিয়ে আয়...' বলে চিৎকার করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। এরপর তারা লাঠি হাতে ছুটে গিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় সাকিবের ভক্তদের। হামলার শিকার বেশ কয়েকজন পরে তাদের ক্ষোভের কথা জানান সংবাদমাধ্যমকে। তাদেরই একজন মাহফুজার দাবি, কোনো উসকানি ছাড়াই তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। তারা বলেন, 'আমরা শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছিলাম। হঠাৎ আমাদের ন্যক্কারজনকভাবে আমাদের ওপর হামলা হলো। পুলিশ-সেনাবাহিনী এসব দেখেও আমাদের রক্ষায় গিয়ে আসেনি। আপনাদের ধন্যবাদ, কয়েকজন সাংবাদিক আমাকে উদ্ধার করেছেন। তবে আমরা এরকম হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সাকিবের বিরুদ্ধে মিছিল হওয়া নিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, এসব সবার সাংবিধানিক অধিকার। আমাদেরও তো সেই অধিকার আছে। আমাদের ওপর হামলা হলো কেন, জবাব চাই।' হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পরও উত্তপ্ত অবস্থা ছিল আরও বেশ কিছুক্ষণ। সাকিবের ভক্তদের যারা তখনও ছিলেন, তাদের এক পাশে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সেনাবাহিনী। দুটি গাড়িতে সেনাবাহিনীর আরও সদস্যকে স্টেডিয়ামের সামনে এসে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এসব নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি পুলিশ, সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কেউই। তবে ১ নম্বর ফটকের কাছাকাছি জায়গা থেকে একজনকে আটক করতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনাবাহিনীর এক সদস্য জানান, দেশবিরোধী সেস্নাগান দেওয়ায় ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের নিরাপত্তা ব্যাহত হতে পারে বলে শঙ্কা থাকায় তাকে আটক করা হয়েছে। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এসবের মধ্যেই চারটার একটু আগে কঠোর নিরাপত্তায় মাঠ ছেড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা দল। বাসের ভেতর থেকে বাইরের নানা কিছু ভিডিও করতে দেখা যায় প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের। বিদায়ী টেস্ট খেলতে সাকিবের দেশে আসতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে এসব কর্মসূচি চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। মিরপুর টেস্টের স্কোয়াডে সাকিবকে রাখায় তার দেশে ফেরা ঠেকাতে সোচ্চার ছিলেন কিছু লোক। সাকিব-বিরোধী মিছিল, সেস্নাগান দেওয়া, স্টেডিয়ামের দেয়ালে নানা লেখা ও গ্রাফিতি আঁকাসহ নানা কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় তাদের। পরে কর্মসূচি শুরু করেন সাকিবের ভক্তরাও। সেসবেরই ধারাবাহিকতা চলছে টেস্ট শুরুর আগেও।