শ্রমিক অসন্তোষে ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ক্ষতি : বিজিএমইএ

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পোশাক খাতে যে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, তাতে অন্তত ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বলে দাবি করেছে বিজিএমইএ। শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানোর পাশাপাশি কিছু দাবিও তুলে ধরেছে সংগঠনটি। বিজিএমইএ কমপেস্নক্সে আয়োজিত এ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, 'শ্রমিক অসন্তোষের ফলে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। প্রতিনিয়ত ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে বলে জানতে পারছি। এটি আরও বাড়বে।' দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজীপুর; ঢাকার সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে পোশাক শ্রমিকরা নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। কোথাও কোথাও সড়ক অবরোধের পাশাপাশি সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে পোশাক খাত বর্তমানে 'স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে' মন্তব্য করে রফিকুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কিছু কার্যাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছে।' তবে বর্তমানে স্থিতিশীলতা 'পুনরুদ্ধার হওয়ায়' আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো আবার ফিরে আসছে বলে দাবি করেন তিনি। বিজিএমইএ সভাপতি রফিকুল বলেন, 'বিজিএমইএ বোর্ডের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারের নির্দেশনায় পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী গঠন হয়েছে এবং যৌথবাহিনী গার্মেন্টস অধু্যষিত অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিতভাবে টহল পরিচালনা করেছে। বিজিএমইএ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কমিউনিটি পুলিশিং চালু করেছে।' তিনি বলেন, 'পোশাক কারখানাগুলোতে আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় বিজিএমইএ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে অর্থ উপদেষ্টাকে চিঠি দেওয়া হয় ও বিজিএমইএ বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন। বিজিএমইএ'র অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগস্ট মাসের বেতনভাতা পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।' শ্রম অসন্তোষে আশুলিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯টি পোশাক কারখানার সেপ্টেম্বর মাসের বেতনভাতা পরিশোধের ক্ষমতা ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, 'ওই সব কারখানা যাতে বিপদে না পড়ে, সেজন্য তাদেরকে সুদহীন সহজ শর্তের ঋণ দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।' রফিকুল বলেন, পোশাক শিল্পের ৪০ লাখ শ্রমিক যাতে ন্যায্য মূল্যে পণ্য পান, সেজন্য তাদেরকে টিসিবির কর্মসূচিতে নেওয়া হয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিন মাস যাতে কোনো কারখানায় গ্যাস-বিদু্যতের লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা হয়, সেজন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংক সুদের হার একক অংকে নামিয়ে আনারও আহ্বান জানান তিনি। প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে বিজিএমইএ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে- শিল্পে সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা; কাস্টমস বন্দর সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো সহজতর ও দ্রম্নততর করা; চট্টগ্রাম বন্দরে লোডিং ও আনলোডিংয়ে অহেতুক সময়ক্ষেপণ বন্ধ করা; আগামী ৩ মাস কারখানার ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা; ব্যাংকখাতের সংস্কার যেন উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কর্মকান্ডে নেতিবাচক প্রভাব না রাখে; কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; শিল্পকে ব্যবসাবান্ধব করতে যথাযথ নীতি সহায়তা প্রণয়নের বিষয়ে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা; শিল্পে পর্যাপ্ত বিদু্যৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা ও বিদু্যতের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণসহ একটি টেকসই বিদু্যৎ ও জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করা; এছাড়া সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ঋণ শ্রেণিকরণ না করা এবং পুনঃতফসিলকরণের সুযোগ দেওয়া; তৈরি পোশাক কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে জরুরি ভিত্তিতে সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের নির্দেশনা প্রদান করা। ঝুটসহ অন্যান্য রিসাইকেলিং উপযোগী বর্জ্য অপসারণকে বাইরের প্রভাবমুক্ত রাখা; পোশাকখাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রণোদনা পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করা; পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নিরাপদ এক্সিট পলিসির ব্যবস্থা করা; শিল্পে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনা। বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুলস্নাহ হিল রাকিব, সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন, রকিবুল আলম চৌধুরী; পরিচালক শোভন ইসলাম, শামস মাহমুদ, রাজিব চৌধুরী, জাকির হোসেন, মহিউদ্দিন রুবেল, শেহরিন সালাম ঐশী, নুরুল ইসলাম, সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী সাগর, রেজাউল আলম মিরু অন্যদের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।