যশোর শিক্ষা বোর্ড
টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক
চার্জশিট দাখিল
প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
বহুল আলোচিত যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেক জালিয়াতি করে প্রায় সাত কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। ফলে দুদক ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। মামলার তিন বছর পর বুধবার সন্ধ্যায় যশোরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালত) এই চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক সমন্বিত কার্যালয় যশোরের উপ-পরিচালক মো. আল-আমিন। তবে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোলস্না আমীর হোসেন ও শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক এএমএইচ আলী আর রেজাকে।
এর আগে ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবরে শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোলস্না আমীর হোসেনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাটি করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল।
চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন- যশোর শিক্ষা বোর্ডের হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম, রাজারহাটের ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শেখ শরিফুল ইসলাম, হাইকোর্ট মোড়ের শাহী লাল স্টোর মালিক আশরাফুল আলম, পোস্ট অফিস পাড়ার নূর এন্টারপ্রাইজের মালিক গাজী নূর ইসলাম, শহরের জামে মসজিদ লেন এলাকার প্রত্যাশা প্রিন্টিং প্রেসের মালিক ও ইকবাল হোসেনের স্ত্রী রুপালী খাতুন, উপশহর ই-বস্নক মো. সহিদুল ইসলাম, একই এলাকার সোনেক্স ইন্টারন্যাশনালের মালিক রকিব মোস্তফা, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সহকারী মূল্যায়ন অফিসার আবুল কালাম আজাদ, নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর জুলফিকার আলী, নিম্নমান সহকারী (চেক ডেসপাসকারী), মিজানুর রহমান, ও সাধারণ কর্মচারী (চেক ডেসপাসকারী) কবির হোসেন।
২০২১ সালের ৭ অক্টোবর
আত্মসাতের প্রথম ঘটনাটি ধরা পড়েছিল। চার্জশিটে উলেস্নখ করা হয়েছে, মোট ১১ জন আসামি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোরের ৩৮টি জালিয়াতি করে মোট ছয় কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার তিন টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
মামলার তদন্তাকরী কর্মকর্তা দুদক যশোর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আল আমিন চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দন্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় এ চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
চার্জশিটে উলেস্নখ করা হয়েছে, তদন্তকালে দেখা যায়, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোরের প্রায় ২৫টি হিসাব সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, বিআইএসই শাখা, যশোরে পরিচালিত হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছর হতে ২০২১-২০২২ অর্থবছর পর্যন্ত (হিসাব নং ২৩২৩২৪০০০০০২৪) ৩৮টি চেক জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা প্রদানের পর ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৬ টাকার স্থলে ছয় কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার ৩৯৭ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
তদন্তকালে দেখা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ৩৮টি চেকের মধ্যে টিএ/ডিএ বিল বাবদ আসামি আব্দুস সালামের নামে ইসু্যকৃত চেক তিনটি, সাধারণ বিল বাবদ সহকারী সচিব আশরাফুল ইসলামের নামে ইসু্যকৃত চেক একটি, মিম প্রিন্টিং প্রেসের নামে তিনটি, মেসার্স খাজা প্রিন্টিং প্রেসের নামে দুটি, নিহার প্রিন্টিং প্রেসের নামে একটি, সবুজ প্রিন্টিং প্রেসের নামে একটি, শরিফ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে একটি, সানিয়া ইলেক্ট্রনিক্সের নামে একটি, নুর এন্টারপ্রাইজের নামে আটটি, প্রত্যাশা প্রিন্টিং প্রেস নামে তিনটি, শাহী লাল স্টোরের নামে একটি, দেশ প্রিন্টার্স নামে একটি, সেকশন অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদের নামে একটি, অর্পানেটের নামে একটি, আয়কর কর্তন বাবদ ইসু্যকৃত চেক চারটি ও ভ্যাট কর্তন বাবদ ইসু্যকৃত চেক ছয়টি চেক রয়েছে।
দুদক যশোরের উপ-পরিচালক আল আমিন জানান, যশোর শিক্ষা বোর্ডের ইসু্যকৃত ৩৮টি চেক রিসিভ করার পর টেম্পারিং/ঘষামাজার মাধ্যমে ছয় কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার তিন টাকা (ছয় কোটি চুয়াত্তর লাখ তেতালিস্নশ হাজার তিন) নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে অভিযুক্তরা।