মেয়াদ পূর্ণ করতে চান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের অপসারণ না করে পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন করতে দেওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের হোটেল ইম্পেরিয়ালে এই সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন জেলার অন্তত ১২ জন চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুফতি আমজাদ হোসাইন আশরাফী বলেন, 'বিভিন্ন মাধ্যমে শুনছি চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হতে পারে। এতে আমরা বিচলিত। আমরা মোট ১০২৩ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে বেশিরভাগ স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান। আর নৌকার অল্প কিছু থাকলেও দেশের অন্য সব দলের চেয়ারম্যানও রয়েছে। তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বাদ দেওয়া অন্যায় হবে। এমন ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসের আর কখনও ঘটেনি।' সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যানরা বলেন, তারা স্থানীয় পর্যায়ে সরকারে সহযোগী এবং প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে কাজ করেন। যদি পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয় বা চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়, তাহলে দেশে ও দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে জনগণকে সরকারি সেবা দেওয়ার কাজ 'ব্যাহত হবে'। ইউপি চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতিতে গ্রামগঞ্জে চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির 'মারাত্মক অবনতি' হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। হেফাজতে ইসলামীর নবীনগর উপজেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতি আমজাদ হোসাইন আশরাফী বলেন, 'আমরা তৃণমূলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি এবং ৬৫ শতাংশ চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সব দল ও মতের মানুষকে সমানভাবে সেবা প্রদান করে আসছি। বর্তমান অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগী হিসেবে আমরা প্রতিদিন অফিস করে আসছি, যাতে করে জনসাধারণের সেবা প্রধান ব্যহত না হয়।' তুমুল গণ-আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে। এরপর সহিংস পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে চলে যান। এ অবস্থায় বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতিতে কাজ চালাতে আইন সংশোধন করে সরকার। এরপর আগস্টের দ্বিতীয়ার্ধে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে প্রশাসক বসানো হয়। তখন ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে না দিলেও এখন অন্তর্র্বর্তী সরকার সে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে শোনার কথা বলেন চেয়ারম্যানরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবদলের গ্রাম সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও নবীনগর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম আর মুজিব বলেন, 'আমি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। আমাদের যদি দায়িত্ব সম্পন্ন করতে না দেওয়া হয়, এটা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। এখানে সব দলেরই চেয়ারম্যান রয়েছে।' ইসলামী আন্দোলনের নরসিংদী জেলা শাখার সহ-সভাপতি মুফতি কাওছার আহমাদ ভূঁইয়া নরসিংদী সদরের মহিষাশুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ''দেশের জন্য, গ্রামের মানুষের সেবার জন্য হলেও চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পূর্ণ করতে দেওয়া উচিত। একপাক্ষিকভাবে অপসারণ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত হবে। চেয়ারম্যানদের অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা 'বৈষম্যমূলক' হবে বলে দাবি করেন।'' নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন খন্দকার। তিনি বলেন, 'বিগত সরকারের সময়ে অনেক সচিব নিয়োগ পেয়েছে। সেসব সচিবদের বিলুপ্ত না করে আমাদের করলে অন্যায় হবে। আগে সচিবদের বিলুপ্ত করুন, এরপর আমাদের করুন।' বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন এ সংবাদ সম্মেলনে। ইউনিয়ন পরিষদে যেসব সেবা দেওয়া হয় বিজিএফ ও ভিডবিস্নউডির চাল বিতরণ, টিসিবি পণ্য বিক্রি, কৃষি ও মৎস্য প্রণোদনা বিতরণ, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে, যা বিতরণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করতে হয়। ওয়ারিশান সনদপত্র, চারিত্রিক/নাগরিক সনদপত্র, জন্মনিবন্ধন ও মৃতু্যনিবন্ধনের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকেই হয়। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে গ্রাম-মহলস্নায় বিভিন্ন শালিস দরবার তথা নতুন রাস্তা নির্মাণ, পুরনো রাস্তা মেরামত ও সরকারি সেবাদানের প্রতিষ্ঠানগুলো ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমেই রক্ষণাবেক্ষণ হয়।