বেশিরভাগ আড়তে ঝুলছে তালা

চট্টগ্রামজুড়ে ডিমের সংকট

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

চট্টগ্রাম বু্যরো
চট্টগ্রাম নগরের ডিমের বৃহৎ পাইকারি বাজার পাহাড়তলী ও স্টেশন রোডের বেশিরভাগ আড়তে তালা দিয়ে বিক্রি বন্ধ রেখেছে ব্যবসায়ীরা। নতুন ডিম সরবরাহ হয়নি- এমন অজুহাতে তৃতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে দোকান ও আড়ত। যার ফলে পুরো চট্টগ্রামজুড়ে ডিমের সংকট তৈরি হয়েছে। কয়েকটি পাইকারি প্রতিষ্ঠান অধিক দামে ডিম বিক্রি করলেও নগরের বেশিরভাগ আড়ত বন্ধ থাকায় বিপাকে খুচরা দোকানি ও সাধারণ ভোক্তারা। খুচরা ক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রায় এলাকায় প্রতি পিস ডিম ১৬-১৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা মতে, তাদের মোকামে নতুন ডিম আসেনি। যা আছে তা আগের কেনা, বেশি দামে কেনা ডিম কোনোভাবেই কম দামে বিক্রি সম্ভব না। যার কারণে তারা দোকান বন্ধ রেখেছেন। চট্টগ্রাম নগরে ডিমের পুরো সরবরাহ নির্ভর করে পাহাড়তলী বাজারের ওপর। বুধবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০টি ডিমের আড়ত ও পাইকারি দোকান রয়েছে এখানে। প্রতিদিন ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ ডিম বিক্রি হয় এই বাজারে। তবে গত শনিবার থেকে এই বাজারের প্রায় প্রতিটি আড়তে কেনাবেচা বন্ধ। দুয়েকটি পাইকারি দোকান খোলা থাকলেও বেচাবিক্রি বন্ধ রয়েছে। যেসব দোকান খোলা রয়েছে সেখানেও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দরে। এসব দোকানে শত প্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকায়, যা পিস হিসেবে দাম পড়ে ১৪ টাকা। আড়তদাররা জানান, সরকারি দামে ডিম কিনতে না পারা এবং প্রশাসনের অভিযানে জরিমানার কারণে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন তারা। দেড় মাস ধরে তাদের ডিম কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। তবে সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে আরও কম। ফলে লোকসান গুণে বিক্রি করতে হচ্ছে। এর ওপর প্রশাসনের অভিযানের কারণে আরও লোকসান গুণতে হচ্ছে। তাই তারা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। জানা যায়, সরকার উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা দর নির্ধারণ করে। ওই হিসেবে খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম ১৪২ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে এখন ১৮০-১৯০ টাকায় ডিম বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আড়ত থেকে ডিম কিনতে হচ্ছে ডজনপ্রতি ১৬৫ টাকায়। এ অবস্থায় তাদের ১৮০ টাকায় বিক্রি না করলে খরচসহ লাভ উঠছে না। আড়তে ডিমের দাম বেশি হিসেবে পাইকারদের দাবি- উৎপাদন পর্যায় থেকে করপোরেট ও সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি লাভ করছে এ জন্যই অস্থিতিশীল বাজার। চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কুর বলেন, আমাদের বাড়তি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। মঙ্গলবার আমরা ডিম কিনেছি ১২ টাকা ৫০ পয়সায়। আজকে আমাদের ১২ টাকায় ডিম দিতে রাজি হয়েছে। তাহলে কীভাবে ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় ভোক্তারা ডিম পাবে। তাই যতদিন সরবরাহকারীরা সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ডিম সরবরাহ করবে না, ততদিন আমাদের আড়তও বন্ধ থাকবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, মধ্যস্বত্বভোগী আসলে আড়তদাররাই। তারা একযোগে সব দোকান বন্ধ রেখে বাজারে সংকট তৈরি করার চেষ্টা করছে। বিষয়গুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, চট্টগ্রামের আড়তদাররা বৈঠকে খামারি ও আড়তদারদের মাঝামাঝি কিছু টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। মূলত তারা দর বেশি রাখার কারণে আড়ত ও পাইকারদের বেশি দামে কেনাবেচা করতে হচ্ছে। সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, আমাদের ডিসি স্যার টাঙ্গাইলের ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছেন। টাঙ্গাইলে আজকে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দরে কেনাবেচা নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছি। আমরা আশা করি, সরকার নির্ধারিত মূল্যে কেনাবেচা করবে।