অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, এখনো সময় চলে যায়নি, নির্বাচনের সঠিক তারিখ নির্ধারণ করুন। অনেকেই বাহানা করে আপনাকে (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) বুঝাতে পারে, সংস্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। কিন্তু সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করুন। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন, অভিজ্ঞ মানুষ দ্বারা দেশ পরিচালিত হবে। সেই সংসদে সংবিধান পরিবর্তন, পরিবর্ধন হবে- এটাই জনগণের চাওয়া।
বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) উদ্যোগে 'গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির ভূমিকা'- শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুক বলেন, জনগণের মনের আশা পূর্ণ করার জন্যই আজকের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেটা কি পূরণ হচ্ছে? সংস্কারের নামে যদি আবার বিলম্ব হয়, সংস্কারের নামে যদি আবার আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা এসে বসে যায়, তাহলে আমাদেরকে আবার রাস্তায় নামতে হবে। আমরা আর রাস্তায় নামতে চাই না। আমরা মানুষকে শান্তিতে রাখতে চাই। আমরা মানুষকে গণতন্ত্র ফেরত দিতে চাই। আমরা শেখ হাসিনার প্রেতাত্মাদের বাংলাদেশের ক্ষমতায় দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের বেলায় মামলা হওয়ার আগেই পুলিশ চলে যায় বাসায়, আর এখন আওয়ামী লীগের গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা কেন জামিন পায়- জনগণ তা জানতে চায়? এখন মামলা হলে পুলিশ বলে তদন্ত করে দেখব মামলা সঠিক কিনা। কোথায় হারুন-বিপস্নব? কোথায় মেহেদী? যারা বিএনপির অফিসকে তছনছ করেছে। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে, এখন কেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে?
'নির্বাচনের তারিখ ঠিক করে কাজ শুরু করেন'
নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী কাজ শুরু করতে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে 'দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন'র উদ্যোগে 'সীমান্তে হত্যা বন্ধ, ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচারের দাবি এবং লুট হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার দাবিতে' আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।
সরকারের উদ্দেশে দুদু বলেন, 'এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন কেন? দেশের ছাত্র, শ্রমিক, মেহনতী মানুষ গত তিনটা নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। ভোট দেওয়ার আশায়, সুষ্ঠু নির্বাচনের আশায় ফ্যাসিবাদ হাসিনাকে বিদায় করেছে তারা। তাই কবে, কোন দিন নির্বাচন দেবেন দিন-তারিখ ঠিক করে কাজকাম শুরু করেন। তাহলে একটা ফলাফল পাওয়া যাবে।'
'যদি না বলেন (দিন-তারিখের কথা) তাহলে দেশের মানুষের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হবে। সেটা দেশের জন্য, সরকারের জন্য, দেশের মানুষের জন্য- কারও জন্যই ভালো হবে না।'
দুদু বলেন, 'যারা অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠন করেছেন তাদের হাতে বেশি সময় আছে বলে আমার মনে হয় না। যারা ভারতে পালিয়ে গেছে তারা বাদে আমি, আমার দল, আমার নেতা এবং দেশে ছোট বড় যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে তারা সমর্থন দিয়েছে এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, আইন-শৃঙ্খলার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ভোট এবং ভাতের অধিকারের প্রতিষ্ঠা হবে এই স্বপ্ন নিয়ে দেশের জনগণ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে পরাজিত করেছে। ভাত এবং ভোটের অধিকার দেশের মানুষের জন্মগত অধিকার।'
তিনি বলেন, 'যারা নির্বিচারে ছাত্র, শ্রমিক, মেহনতী মানুষকে হত্যা করেছে, সেই সব হত্যাকারীকে অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই সরকার জাতিকে আশ্বাস দিয়েছিল, বিচার করবে।'
দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রেসিডেন্ট লায়ন ফারুক রহমান, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, সাবেক এমপি জ্যোতি, কৃষকদল নেতা এস কে সাদীসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
'ভারতের বক্তব্য গভীর মাস্টারপস্ন্যানের অংশ'
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য শুধু অনভিপ্রেত নয়, একটি গভীর মাস্টারপ্যানের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
দেশ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র চক্রান্ত চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'চক্রান্ত ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই। এবারের দুর্গাপূজায় কোথাও কোনো অশান্তি হয়নি। বিএনপি এবং তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন পূজামন্ডপ পাহারা দিয়েছেন। এমনকি দেশের মাওলানা, হুজুর তারা পর্যন্ত পূজামন্ডপ পাহারা দিয়েছে। এদেশে মুসলমান, হিন্দু যারা যুগ যুগ ধরে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন। এখন এক শেখ হাসিনাকে যারা আশ্রয় দিয়েছে তারা অপেক্ষায় থাকেন কী করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা নেই এই কথাটি বলা যায়।'
বুধবার দুপুরে রাজধানীর গোড়ানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশীদ হাবিব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ।