বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, 'আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেই দেশ অন্য কোনো দেশের অধীনতা মেনে নেবে না। পৃথিবীর অন্য ১০টি দেশ যেমন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, বাংলাদেশও তার শির উঁচু করে দাঁড়াবে। বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে, কিন্তু কোনো প্রভু আমরা মেনে নেব না। কেউ প্রভুত্ব করতে এলে জাতি তার সঠিক জবাব দিবে।'
মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকনাথ উদ্যানে (ট্যাংকেরপাড়) পৌর মুক্ত মঞ্চে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন- আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে গেলে পাঁচ লাখ লোককে হত্যা করা হবে। কিন্তু গণ-অভু্যত্থানের পর পাঁচজনকেও হত্যা করা হয়নি। মব জাস্টিস নামে দুই একটি হত্যাকান্ড ঘটেছে। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। তারাও আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় জড়িত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনই ছাত্রলীগ। তারা এখনো খুনের নেশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।'
জনগণকে সাবধান থাকার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, 'তাদের অন্তরে (আওয়ামী লীগ) জ্বালাপোড়া শুরু হয়েছে। তারা অঘটন ঘটাতে চায়। আনসার কান্ড, বয়স কান্ড, বিচারিক কু্য করতে চেয়েছে। জনগণ তা ব্যর্থ করে দিয়েছে। ইসলামী চাদর দিয়ে নতুন রূপে আর্ভিভূত হয়েছে। হাতেনাতে ধরা পড়েছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারা বিশেষ একটি ইসলামী সংগঠনের ব্যানারে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। বিশেষ পতাকা বহন করে। বাংলাদেশকে দুনিয়ার সামনে জঙ্গি চরমপন্থি দেশ হিসেবে পরিচয় করাতে চাচ্ছে। জাতি তাদের সম্মিলিতভাবে ব্যর্থ করে দিবে। এই পতাকা নিয়ে যেন দাঁড়াতে না পরে।'
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'জাতির অনেক প্রত্যাশা এই সরকারের কাছে। যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর, তারা যেন সরকারের কোথাও না থাকে। তারা সরকারকে ব্যর্থ করে দিবে। জনগণের স্বপ্ন নষ্ট করে দিবে। যারা চিহ্নিত, তাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে সরিয়ে দিতে হবে।'
জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, 'দুষ্ট সিন্ডিকেট পেঁয়াজ ৩০০ টাকা করেছিল। এই দুষ্ট সিন্ডিকেটে কারা ছিল। বাণিজ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব চেলাচামুন্ডারা। তারাই সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সন্তানরা বলছে, ৫ আগস্ট আমরা স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এখনো সেই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়নি। এখনো সেই সিন্ডিকেট জাতির ঘাড়ে বসে আছে। এই সিন্ডিকেট ভেঙে তছনছ করে দিতে হবে। নইলে বাংলাদেশের মানুষ তাদের হাতে আরও নির্যাতিত হবে।'
তিনি বলেন, 'আমরা এমন একটি সমাজ গঠন করতে চাই, যেখানে বিচার প্রার্থীকে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি শিকার হতে হবে না। কোনো বিচারক আসনে বসে আলস্নাহকে ছাড়া কোনো রাষ্ট্র শক্তিকে পরোয়া করবে না। রাষ্ট্রের আইন ও বিবেক অনুযায়ী বিচার কার্য পরিচালনা করবে। আমরা শুনতে চাই না, বিচারকরা আসনে বসে ঘুষ খায়। পত্রপত্রিকা বের করে নিয়ে আসে অমুক ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, তার পাঁচটি বাড়ি রয়েছে, ১০টি গাড়ি রয়েছে। এই কলঙ্কজনক কথা শুনতে চাই না। আমরা এমন একটি বিচারব্যবস্থা চাই, যেই বিচারব্যবস্থা উঁচু নিচু কাউকে ভাববে না। বিচারপ্রার্থীকে বিচারপ্রার্থী হিসেবে দেখবে। কোনো বিচারপ্রার্থী যদি মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আদালতে হাজির হয়, তাহলে মিথ্যার অভিযোগে তাকে দন্ড পেতে হবে। আবার যদি সঠিক অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়, তাকে অন্যায়ভাবে বিচার প্রভাবিত করে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হবে না।'
তিনি বলেন, 'হাজার প্রাণের বিনিময় এবং হাজার হাজার মানুষের পঙ্গুত ও আহত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই বিপস্নব সংগঠিত হয়েছে। সেসব শহীদ পরিবারের প্রতি আপনারা সম্মান প্রদর্শন করুন। পাঠ্যপুস্তকে তাদের যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলার ব্যবস্থা করুন। ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরেন। প্রত্যেকটি শহীদ পরিবার থেকে কমপক্ষে একজনকে সরকারি চাকরি দিন। প্রত্যেকটি আহতকে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দিতে হবে। তারা এসব নিয়োগের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেননি। কিন্তু তাদের প্রতি সম্মান দেখানো আমাদের কর্তব্য। তারা সরকারি চাকরিতে গেলে দেশের জন্য জানপ্রাণ দিয়ে চাকরি করবে।
জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মোহাম্মদ গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ.টি. এম মাসুম।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ মুবারক হোসেনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় মজলিশে সূরা সদস্য ও কুমিলস্না-নোয়াখালী অঞ্চল টিম সদস্য মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাবেক আমির কাজী নজরুল ইসলাম খাদেম, সৈয়দ গোলাম সারোয়ার, সাবেক নায়েবে আমির কাজী মো. ইয়াকুব আলী, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।