খরচ হয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা
দুই মাস ২৭ দিন পর চালু মিরপুর-১০ মেট্রোস্টেশন
প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
দুই মাস ২৭ দিন পর চালু হলো মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশন। এজন্য ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
মঙ্গলবার এই স্টেশনটি চালু করার সময় তিনি বলেন, যেহেতু অন্যান্য স্টেশনগুলো থেকে অনেক যন্ত্রাংশ এনে এখানে সংযোজন করেছি, তাই সে সব যন্ত্রাংশ আমদানিসহ আমাদের দুই স্টেশনে মোট খরচ হবে ১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সেখানে আরও কিছু যন্ত্রাংশও উদ্বৃত্ত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বিদেশি ও বাংলাদেশি মেট্রোরেলের অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের সহযোগিতায় স্টেশনটি চালু করা সম্ভব হয়েছে। গত ১৯ জুলাই আন্দোলনের সময় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন ভাঙচুর করা হয়। গত ১৪ আগস্ট এই দুটি স্টেশন নিয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয় বলে জানায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ।
এর আগে সোমবার ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, 'এই স্টেশন ঠিক করতে কোনো ঠিকাদার বা বিদেশি কাউকে লাগেনি। ডিএমটিসিএল নিজেই দুটি (কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০) স্টেশন ঠিক করেছে।'
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, 'আমরা মেট্রোরেলকে সহায়তার জন্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাফিউল হাসানের নেতৃত্বে একটি "ওভারসাইট কমিটি" করেছিলাম। সেখানে বিদেশে মেট্রোরেলে কাজ করেন, এমন একজন দক্ষ লোককে যুক্ত করেছিলাম। ছাত্র আন্দোলনের একজন প্রতিনিধিও যুক্ত ছিলেন। এই কমিটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন।'
মন্ত্রণালয় এবং মেট্রোরেলের সর্বস্তরের কর্মীদের নিয়েই স্টেশনটি চালু করা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা।
আন্দোলনের সময় ভাঙচুরের পর মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন ঠিক করতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ও ১ বছর সময় লাগবে বলে বলা হয়েছিল।
ওই খরচ এবং সময়মীমা নিয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, 'এমন নানান কিছু শোনা গিয়েছিল। আমরা সেটি স্বল্প ব্যয়ে কম সময়ে করতে পেরেছি। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে স্বল্প ব্যয়ে কীভাবে উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া যায়, তা আমরা করব। আমরা আশা করি, অপচয় রোধ করে সেই টাকা সাধারণ মানুষের কাজে ব্যবহার করতে পারব।'
মেট্রোরেলে টাকা অপচয় নাকি দুর্নীতি হয়েছে জানতে চাইলে-তিনি বলেন, 'আমরা এখনো এটাকে অপচয় বলছি। কারণ দুর্নীতি বললে, তার বিষয়ে সুস্পষ্ট থাকতে হবে।'
ভবিষ্যতে অপচয় কমানোসহ মেট্রোরেলে গতি আনতে দক্ষ-যোগ্য ব্যক্তিকে মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'আমাদের প্রাথমিক কাজ একজন পেশাদার এমডিকে দায়িত্ব দেওয়া, যেন তিনি মেট্রো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হন।' মেট্রোরেলের বিভিন্ন স্তরে 'প্রভাবমুক্ত হয়ে যোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হবে' বলেও আশ্বাস দেন ফাওজুল কবির খান।
মেট্রোরেলের ভাড়া কমবে কি না, সেই প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, 'সরকারের ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা এটি বিবেচনায় নেব।' তিনি বলেন শহরের যানজট এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সরকারের কাজের অগ্রাধিকারে আছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) এর কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাফিউল হাসানসহ অনেকে এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১৮ জুলাই বিকালে বন্ধ হয়ে যায় মেট্রোরেল। পরদিন মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলা চালানো হয় পলস্নবী ও ১১ নম্বর স্টেশনে। এরপর থেকেই মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এক মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ২৫ আগস্ট মেট্রোরেল চালু করা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর ১০ এবং কাজীপাড়া স্টেশন দুটি চালু করা যাচ্ছিল না। মেরামত শেষে প্রথমে যাত্রী চলাচলের জন্য গত ২০ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হয় কাজীপাড়া, এবার চালু হলো মিরপুর ১০।
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে এমআরটি-৬ লাইনের উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনের সবগুলোই খুলে দেওয়া হয়।
মেট্রো 'ম্যাজিকের মতো' :সকাল পৌনে ১০টায় কাওরানবাজার যাওয়ার জন্য মিরপুর ১০ স্টেশনে আসেন নাঈম হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি টিকিট মেশিনে টাকা দিয়ে কয়েকবার চেষ্টা করেও টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। পরে কাউন্টারে গিয়ে স্টেশনকর্মীদের কাছ থেকে টিকিট সংগ্রহ করেন নাঈম।
তার পেছনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ফেরদৌস সারোয়ার নামে আরেকজনকে দেখা যায় মেশিনে টাকা দিয়েই নির্বিঘ্নে নিজে নিজে টিকিট কাটতে পেরেছেন।
নাঈম হোসেনের টিকিট কাটতে না পারার কারণ কী জানতে চাইলে স্টেশন কন্ট্রোলার খাইরুল ইসলাম বলেন, 'অনেক সময় পুরান টাকা বা ছেঁড়া টাকা হলে মেশিন নিতে চায় না। তবে আমাদের সবগুলো মেশিনই সচল আছে।'
যাত্রী ফেরদৌস সারোয়ার বলেন, 'আমার অফিস ফার্মগেট হওয়ায় নিয়মিত মেট্রোতেই অফিসে যেতাম। মাঝে এই স্টেশনটা বন্ধ থাকায় বাসে যেতে হয়েছে। তখন অনেক ভোগান্তি হতো। বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা। বাসও জায়গায় থেমে থাকে। ফলে সময়ও লাগত বেশি।'
মিরপুর ১০ স্টেশন চালু হওয়ায় ভোগান্তি কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এই যানজটের ঢাকা শহরে তো মেট্রো ম্যাজিকের মতোই গন্তব্যস্থলে নিয়ে যায়।' তবে ৫ মিনিট পর পর মেট্রো পরিচালনা করার দাবি জানান তিনি। বিশেষ করে অফিস টাইমে প্রতি ৫ মিনিট পর পর মেট্রো চালু হওয়া দরকার বলে মনে করেন সারোয়ার।
আগামী শুক্রবার থেকে অফপিক টাইমে মেট্রোরেলের হেডওয়ে (দুই ট্রেনের মধ্যবর্তী সময়) ১২ মিনিটের জায়গায় ১০ মিনিট করা হবে বলে জানিয়েছে ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটড (ডিএমটিসিএল)। এতে ৬০টির বদলে দিনে ৭২টি ট্রেন চলাচল করবে।