পূজামন্ডপে সঙ্গীত-বিতর্ক
রিমান্ড শুনানিতে আইনজীবীদের বিতন্ডা, বিব্রত বিচারক
প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
চট্টগ্রামের একটি পূজামন্ডপের মঞ্চে সঙ্গীত-বিতর্কের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দুইজনের রিমান্ড শুনানিতে বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বাগ্?বিতন্ডায় বিব্রত হয়ে এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
আদালত সূত্র জানায়, পূজামন্ডপে সঙ্গীত পরিবেশনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের করা রিমান্ড আবেদনের শুনানি ছিল গতকাল। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করেছেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উলস্নাহ এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে আসামিদের জামিন শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য রাখা হয়েছে। এর আগে শুনানিতে বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাগ্?বিতন্ডায় জড়ান।
গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরের পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। দুই আসামি হলেন- চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্য শহীদুল করিম ও নুরুল ইসলাম। দুইজনই মাদ্রাসার শিক্ষক।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এ এ এম হুমায়ুন কবির বলেন, 'পুলিশের করা রিমান্ড আবেদন বাতিলের জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আবেদন করেন। একই সঙ্গে জামিনের আবেদনও করা হয়। অপরদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নিয়ে আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করেন। ওই সময় দুইপক্ষ তুমুল বাগ্?বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে বিচারক রিমান্ড আবেদন বাতিলের আদেশ দিয়ে এজলাস থেকে নেমে যান।'
আদালত সূত্র জানায়, আসামিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন- আইনজীবী শামসুল আলম। তিনি আদালতকে বলেন, 'আসামিরা পূজা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন। মঞ্চে ওঠার আগে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়।'
অন্যদিকে বাদীপক্ষের সুজন দাসসহ কয়েকজন আইনজীবী অংশ নেন। তারা আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুরের দাবি জানান। তারা বলেন, 'আসামিরা যে গান করেছেন, এতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন।'
গত শুক্রবার নগরের কোতোয়ালি থানায় মহানগর পূজা কমিটির অর্থ সম্পাদক সুকান্ত বিকাশ মহাজন বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে কমিটির যুগ্ম সম্পাদক (বহিষ্কার) সজল দত্ত, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্য শহীদুল করিম, নুরুল ইসলাম, আবদুলস্নাহ ইকবাল, মো. রনি, গোলাম মোস্তফা, মো. মামুনসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে মহানগর পূজা উদ্?যাপন কমিটি স্থানীয় বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীর মাধ্যমে সন্ধ্যার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন পূজামন্ডপে আসতে শুরু করেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতে থাকেন। ইতোপূর্বে পূজা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্ত (ঘটনার পর বহিষ্কৃত) চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পীকে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করার কথা বলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার দিন (গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়) চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পী অনুষ্ঠানে আসেন এবং দুটি গান পরিবেশন করেন। এর মধ্যে একটি গানের ভাষার শব্দচয়নে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার মতো মনে হওয়ায় পূজা উদ্যাপন কমিটি তাৎক্ষণিক গান বন্ধ করতে গিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা চিন্তা করে বন্ধ করেনি। ইতোমধ্যে পরিবেশন করা একটি গান (গজল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।