নিত্যপণ্যের বাজারে চরম অস্থিরতা চলছে। প্রতিদিনই মাছ, মাংস ও শাক-সবজির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত এক দিনের ব্যবধানে সব ধরনের মুরগি, মাছ ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বাজারে নৈরাজ্যের কারণ হিসেবে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই দায়ী করছেন ভোক্তারা।
ভোক্তাদের দাবি, গত কয়েকদিনে কাঁচাবাজারে সবজির দাম দ্বিগুণ হয়েছে। বেশিরভাগ সবজি ১০০ টাকার নিচে কেনা যাচ্ছে না। আর শীতকালীন সবজির দাম আকাশচুম্বী। অচিরেই বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ চান ভোক্তা সাধারণ। রোববার রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও তালতলা বাজারে আলাপকালে এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভোক্তারা।
ক্রেতারা জানান, বাজারে কোনো পণ্যেরই দাম কমার কোনো সুখবর নেই। দুই-দিন আগে পেঁয়াজ কিনলাম ১২০ টাকা কেজি। আজ ৫ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকা দরে কিনতে হলো। ইলিশ ধরা বন্ধ হওয়ায় মাছের বাজারও চড়া রয়েছে।
মো. ইসমাইল হোসেন সস্ত্রীক এসেছেন তালতলা বাজারে। তিনি বলেন, প্রতিদিন বাজার করে বাসায় নিয়ে গেলে পরিবারে মনোমালিন্য হয়। সংসারে চাহিদার সঙ্গে জোগান দিতে পারি না। তাই বাজারের চিত্র দেখাতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এলাম। প্রতিদিন যেভাবে দাম বাড়ছে, আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্তরা জীবন নিয়ে বেঁচে থাকাটাই দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে বাজারের লাগাম টানা যাবে না বলে মনে করে শেওড়াপাড়া বাজারে বাজার করতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আবুল কাশেম।
তিনি বলেন, বাজার সিন্ডিকেটের কারণে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। দোকানিরা তাদের ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা করছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সরকারের মনিটরিং জোরদার করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অন্তর্র্বর্তী সরকারের সব সফলতা বিফলে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে রোববার রাজধানীর এসব বাজারে কাঁচা মরিচ ৪০০ টাকা, শীতকালীন সবজি শিম ৪৮০ টাকা এবং নতুন আলু ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসব বাজারে মাছ ও মুরগির দামও বেড়েছে।
রাজধানীর এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখী ৮০- ১০০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১০০-১৪০, করলা ৮০-১০০, কাঁকরোল ১২০, পটল ১০০, ঢেঁড়স ১০০, বরবটি ১৪০, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ ৫০ টাকা, ধুন্দুল ১০০, চিচিঙ্গা ১০০, কচুরলতি ১০০-১২০ টাকা, ঝিঙা ১২০, শসা ৮০-১২০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, এক দিনের ব্যবধান বাজারে সব ধরনের মুরগির দাম বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি ২১০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে সোনালি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড ২৬০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩৩০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি সিম ৪৮০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৬০-৮০ টাকা, বাঁধা কপি ছোট সাইজের ৮০, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ২২০-২৫০ টাকা, গাজর ১৮০, মুলা ৮০ টাকা এবং জলপাই ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে লেবুর হালি ৩০-৬০ টাকা, ধনে পাতা ৬০০ টাকা কেজি, কাঁচাকলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, চাল কুমড়া ৮০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে লালশাক ২৫ টাকা আঁটি, লাউশাক ৫০, মুলাশাক ২৫, কলমিশাক ২০, পুঁইশাক ৪০ টাকা এবং ডাটাশাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজারগুলোতে এক দিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকা, আদা ৩২০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা, নতুন আলু ১২০ টাকা, বগুড়ার আলু ১০০ টাকা এবং পুরান আলু কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০-৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০, গরুর মাথার মাংস ৪৫০, গরুর বট ৩৫০-৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২৩০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। এসব বাজারে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৪৫০ টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০-৫০০, দেশি মাগুর মাছ ৮০০-১১০০, মৃগেল ৩২০-৪০০, চাষের পাঙাশ ২০০- ২২০, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০-১৪০০, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৫০০-৮০০, কাতল ৪০০-৫০০, পোয়া মাছ ৪৫০-৫০০, পাবদা মাছ ৪০০-৪৫০, তেলাপিয়া ২২০, কৈ মাছ ২২০-২৩০, মলা ৫৫০, বাতাসি টেংরা ১৩০০, টেংরা মাছ ৬০০- ৮০০, কাঁচকি মাছ ৫০০, পাঁচমিশালি মাছ ২২০, রুপচাঁদা ১২০০, বাইম মাছ ১২০০-১৪০০, দেশি কই ১২০০, শোল মাছ ৬০০-৯০০, আইড় মাছ ৬৫০-৮০০, বেলে মাছ ৮০০ টাকা এবং কাকিলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে ৫ কেজি সোয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনি কেট চাল ৭৫-৮০ টাকা এবং নাজির ৭৫-৮২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।