মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

ছাত্র-জনতার বিপস্নবে সরকার পরিবর্তন ছাড়া অন্য কিছুই বদলায়নি :গয়েশ্বর রায়

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
ছাত্র-জনতার বিপস্নবে সরকার পরিবর্তন ছাড়া অন্য কিছুই বদলায়নি :গয়েশ্বর রায়

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায বলেছেন, ''প্রধান উপদেষ্টাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অপমানিত করায় গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাহলে বিএনপির ওপর এত অত্যাচার-নির্যাতন-মিথ্যা মামলা কেন বিবেচনায় আসছে না। আসলে ছাত্র-জনতার বিপস্নবে শুধু সরকার পরিবর্তন ছাড়া 'অন্য কিছুই' বদলায়নি।''

রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে প্রচার দলের উদ্যোগে ''আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে 'দুর্যোগ প্রশমন বিএনপির ভূমিকা' শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- প্রচার দলের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিএনপির কর্মকান্ডের ওপর একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।''

গয়েশ্বর রায় বলেন, 'এক-এগারোর সময় আওয়ামী লীগের সব মামলা যদি উঠে যেতে পারে, তাহলে এখন কেনো আমাদের মামলা উঠছে না। আপনারাই বলেছেন, আমাদের ওপরে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অপমানিত করা হয়েছিল, এতে গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাহলে আমাদের ওপর এত অত্যাচার-নির্যাতন-মিথ্যা মামলা কেনো আপনাদের বিবেচনায় আসছে না।'

তিনি বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মিথ্যা মামলার ব্যাপারে যদি আমরা সমব্যথিত হতে পারি, সোচ্চার হতে পারি, তাহলে আপনারা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর কেন আমাদের মামলাগুলো আগের মতোই আছে, আমাদের আগের মতোই আদালতে যেতে হচ্ছে। এ কারণেই আমি বলেছি, সরকার বদলে গেছে, কিন্তু তুমি-আমি একই আছি, যা ছিলাম আগে।'

বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মান্না দে'র একটি গান হচ্ছে তুমি কি সেই আগের মতোই আছ, নাকি অনেকখানি বদলে গেছ। গানে শুরুটা এ রকম, যদি বলি সরকার বদলিয়ে গেছে, তুমি-আমি একই আছি, আগে যা ছিলাম।'

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। মানুষের জন্য, অধিকারের জন্য দীর্ঘ ১৬ বছর যারা রক্ত দিয়েছে, যারা গুম হয়েছে, যারা সন্তানহারা হয়েছে, যারা পিতৃহারা হয়েছে, যারা মা-হারা হয়েছে, তারা সব হারিয়েছে। মাঝখানে শেখ হাসিনা নাই। সব আগের মতোই আছে।'

গয়েশ্বর বলেন, 'এখনো নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করতে পারেননি। কিন্তু জনগণের ভোট করতে হলে তো নির্বাচন কমিশন লাগবে। কমিশনের পর কমিশন হচ্ছে। আরেকটি কমিশন হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা। এটা জাস্ট টাইম কিলিং। নির্বাচন যত শিগগিরই হবে, জনগণের পার্টিসিপেশনের জোয়ারের রায়ের মধ্যে হবে। এই মুর্হূতে যদি নির্বাচন হয় তাহলে বাংলাদেশে নির্বাচনের অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে জনগণ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হবে। কিন্তু মরা মানুষ উপস্থিত হবে না।'

তিনি বলেন, 'আজকে ১৬ বছর পর জনগণের একটাই দাবি, সুষ্ঠু নির্বাচন। আজকে আপনাদের সেই যে জনগণের আকাঙ্খা, ভোটাধিকার, স্বাধীন ভোট, যাকে খুশি তাকে দিব, সেটা দিয়ে যাবেন সুন্দর করে।'

গয়েশ্বর রায় বলেন, 'আজকে যে আকাঙ্খা, কোটা বৈষম্যবিরোধী থেকে শুরু করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার যে আন্দোলনটা, সেই আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কোনো সাংঘর্ষিক না। একই ধারার আন্দোলন। কিন্তু বর্তমান সরকার তাদেও (ছাত্রদের) আলাদা করতে চান কেনো? ছাত্ররা সচিবালয় ঘেরাও করবে কেনো, কিছু থাকলে তারা সমাবেশ করে সরকারকে সর্তক করবে। আন্দোলন শেষ, আমরা তো চলে গেছি, আমাদের কেউ ডাকে নাই। ১৯৬২ সালে আমি ক্লাস এইটের ছাত্র তখন থেকে শিক্ষা আন্দোলন ছিলাম তখন থেকে সেই রাজনীতি করছি। আমি বলব, তাই ছাত্রদের আলাদা করে বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। বৈষম্যবিরোধী যদি আরেকটা বৈষম্য সৃষ্টি হয়, তার মাসুল কে দেবে।'

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'আপনার দায়িত্ব একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যেটুকু রিফর্ম দরকার হয়, সেটুকু রিফর্মের জন্য বিবেচনা করবেন। আমরা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি। এসব সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা বলছি, আপনারা যদি ব্যর্থ হন জাতি ব্যর্থ হবে, আপনারা ব্যর্থ হওয়া মানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল ব্যর্থ হওয়া। আমরা দেখতে চাই, আপনারা সফল হন। আমরা আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে, আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দেব। মানুষকে আপনারা স্পষ্ট করেন, কবে আপনারা নির্বাচন করবেন।'

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, 'নির্বাচনের জন্য কতটুকু সময় লাগবে বলেন না কেনো? সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন ১৮ মাস, তার কথা বলেছেন বলুক। পরের দিন কেনো সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা সরকারের কথা না। তাহলে সরকারের কথাটা কি? ৩৬ মাস, ৩০ মাস বলেন না, বলতে তো হবে আপনাকে। আপনাকে তো সময় বলতে হবে। কোনো বিয়ে ঠিক হলে তিন মাস আগে তারিখ ঠিক হয়। আমি যদি জানতে পারি, আপনারা এত মাস পর নির্বাচন করবেন, আমাদের তো কাজ আছে, আমাকে জনগণের কাছে যেতে হবে, তাদের বুঝাতে চেষ্টা করব।'

জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের সভাপতি মাহফুজ কবির মুক্তার সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মুহাম্মদ নেছারুল হকসহ জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে