বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে জামায়াতের আমিরের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে '৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের পরিবারের পক্ষ থেকে। এক বিবৃতিতে পরিবারগুলোর সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন সার্বভৌম এই দেশের মাটিতেই রচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে শনিবার
গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১০ অক্টোবর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত সংবিধান নিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের বক্তব্য ছাপা হয়। সেখানে জামায়াতের আমির বলেছেন, 'বাংলাদেশের সংবিধান ভারতের মাটিতে বসে রচনা করা হয়েছিল। তাই আমাদের সংবিধান জন্মভূমি হিসেবে বাংলাদেশকে পায়নি।' জামায়াতের আমিরের ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয় খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের পরিবারগুলোর বিবৃতিতে। এতে বলা হয়েছে, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতেই সংবিধান রচিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবিধান খসড়া প্রণয়ন কমিটির পরিবারের সদস্যরা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-দর্শনকে ধারণ করে লাখো শহীদের রক্তে লিখিত বাংলাদেশের সংবিধান। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সরকার ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ গণপরিষদ আদেশ জারি করে। বাংলাদেশের জন্য সংবিধান প্রণয়ন ছিল গণপরিষদের একমাত্র কাজ। এই আদেশ জারির মধ্য দিয়ে সংবিধান রচনার আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়। তারা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে গণপরিষদের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন করা হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের জন্য ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সংবিধান খসড়া কমিটির সদস্যরা দিনরাত পরিশ্রম করে জনগণের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে রচনা করেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান। দীর্ঘ সময় ধরে আলাপ-আলোচনা ও তর্কবিতর্কের পরে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে সংবিধান বিল গণপরিষদে পাস হয়। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে সংবিধান কার্যকর হয়। সংবিধান প্রণয়ন কমিটির মধ্যে এখনো চারজন জীবিত আছেন। তাঁরা হলেন- ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম, অধ্যাপক আবু সৈয়দ ও আবদুল মুত্তাকিম চৌধুরী।
খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়েছেন ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন (সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের মেয়ে), তানিয়া আমীর (সংবিধান প্রণেতা আমীর উল ইসলামের মেয়ে), নাসরিন ইসলাম (সংবিধান প্রণেতা প্রয়াত প্রফেসর নুরুল ইসলাম চৌধুরীর মেয়ে), মইনুর রহমান (প্রয়াত সংবিধান প্রণেতা হাফেজ হাবীবুর রহমানের ছেলে), মাসুদ আকন্দ (সংবিধান প্রণেতা প্রয়াত এ কে মোশারফ হোসেন আকন্দের ছেলে), নাসরিন (সংবিধান প্রণেতা প্রয়াত অধ্যাপক মো. খোরশেদ আলমের মেয়ে), চিকিৎসক মইনুল ইসলাম চৌধুরী (সংবিধান প্রণেতা প্রয়াত প্রফেসর ইসলাম চৌধুরী ছেলে), আনিসুর রহমান (সংবিধান প্রণেতা প্রয়াত শেখ আবদুর রহমানের ছেলে), দেওয়ান আফতাবুল আলম (সংবিধান প্রণেতা প্রয়াত দেওয়ান আবুল আব্বাসের ছেলে)।