'বাংলাদেশে উগ্রবাদ চলছে বলে ভারত দেখাতে চায়'- এমন অভিযোগ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, 'ভারত চায় যে বাংলাদেশে একটা উগ্রবাদ চলছে তা দেখাতে। এটা তার দেশে যে উগ্রবাদ চলছে তা পুষ্ট হয়। সেই ধরনের অপপ্রচার সবসময় চলছে।'
শনিবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীরর্ যালি শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, 'রাজপথের পরাজিত শক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশকে নিয়ে মিথ্যা ও গুজব ছড়াচ্ছে। তারা ফেক আইডি খুলে নানা রকম গুজব ছড়াচ্ছে। আমাদের এসব বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।'
তিনি বলেন, 'গণ-অভু্যত্থানের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, সেই আকাঙ্ক্ষাকে বুকে ধারণ করে
দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার।'
'গণ-অভু্যত্থান শেষ হয়নি
এর বিপস্নব ঘটাতে হবে'
র্
যালি শেষে নাহিদ ইসলাম যোগ দেন আলোচনা সভায়। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, 'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। সুতরাং উন্নয়ন বরাদ্দে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আর বৈষম্যের শিকার হবে না। চব্বিশের গণ-অভু্যত্থান এখনো শেষ হয়নি, এর বিপস্নব ঘটাতে হবে। আমরা বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা চাই।'
গত দুই মাসে সরকারের প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি উলেস্নখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আমি মন্ত্রিত্ব উপভোগ করতে আসিনি। যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়ন করতে না পারলে কিংবা গণ-অভু্যত্থানের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে না পারলে, আবার জনতার কাতারে দাঁড়াব।' গণ-অভু্যত্থানের চেতনাকে ধারণ করতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, 'দেশের সব আন্দোলন সংগ্রামে শিক্ষার্থীরা রক্ত দিলেও তারা পরবর্তীতে এর সুফল পায়নি। শিক্ষার্থীরা ইতোপূর্বে দাসত্বের জীবন পেয়েছে। আমরা আর দাসত্বের জীবনে ফিরে যেতে চাই না। সারাদেশে ফ্যাসিস্ট কাঠামো ভেঙে দিতে হবে। লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতির পরিবর্তে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অতি দ্রম্নত ছাত্র সংসদ চালু করা হবে।'
নাহিদ ইসলাম তার বক্তব্যে শহীদ আবু সাঈদকে সহযোদ্ধা উলেস্নখ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেন এবং শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মোঃ শওকাত আলীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রথম শহীদ বেরোবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদের পিতা মোঃ মকবুল হোসেন।
প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, বিগত সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়নের খেসারত দিচ্ছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। নতুন বাংলাদেশে নতুন নেতৃত্ব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শহীদ আবু সাঈদের পিতা মোঃ মকবুল হোসেন বলেন, শহীদ আবু সাঈদের হত্যাকারীদের কঠিন শাস্তি চাই। দ্রম্নত বিচার দেখতে চাই। শহীদ আবু সাঈদের নামে এক নম্বর গেটের নামকরণ এবং একটি আবাসিক হলের নামকরণ চাই।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ডক্টর মোঃ শফিকুর রহমান, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন মোঃ ফেরদৌস রহমান, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ডক্টর মোঃ এমদাদুল হক, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ডক্টর প্রামাণিক, ঢাবির মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ডক্টর এবিএম শহিদুল ইসলাম, কাউন্সিল শাখার অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মোঃ ময়নুল আজাদ, গণিত বিভাগের কর্মচারী রেজাউল করীম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সংগঠক শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন, শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন এবং শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে অতিথিদেরকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি এবং শিক্ষকদের মাঝে ইউজিসি প্রদত্ত গবেষণা প্রকল্পের চেক প্রদান করা হয়। গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনজন শিক্ষককে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। তারা হলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর আবু রেজা মোঃ তৌফিকুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ডক্টর মোঃ কামরুজ্জামান এবং ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর মোঃ ফেরদৌস রহমান।
এর আগে অনুষ্ঠানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রযোজনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
উলেস্নখ্য, দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে 'ধন্য বেরোবি, গড়ব দেশ, আবু সাঈদের বাংলাদেশ' স্স্নোগানকে ধারণ করে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোঃ নাহিদ ইসলাম এবং ইউজিসির পতাকা উত্তোলন করেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মোঃ শওকাত আলী। পরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অনুষ্ঠানের অন্য অতিথিদেরকে সঙ্গে নিয়ে নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ নাহিদ ইসলাম।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী উপলক্ষে ক্যাম্পাসে বর্ণিল আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। বাদ্যের তালে তালে শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে পার্কের মোড় প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে ফিরে এসে শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্ণিল এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
শোভাযাত্রা শেষে দিবসটি স্মরণীয় করে রাখতে অতিথিরা বৃক্ষরোপণ করেন।
এছাড়া বিকালে স্বাধীনতা স্মারক মাঠে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাদ আসর কেন্দ্রীয় মসজিদে দুআ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোকসজ্জ্বাসহ নানাভাবে সাজানো হয় ক্যাম্পাস।
'গণহত্যার পক্ষে কাজ করা
গণমাধ্যমের বিচার হবে'
এর আগে শনিবার সকাল ৯টায় ঢাকা থেকে রংপুরে যাওয়ার পথে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'জুলাই-আগস্ট গণহত্যার পক্ষে যেসব গণমাধ্যম ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে কাজ করেছে তাদের বিচার করা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি মামলা হয়েছে এবং কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এখনো যাদের সম্পৃক্ততা আছে তদন্তসাপেক্ষে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।'
এ সময় তাকে নীলফামারী জেলা ও সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন এবং সৈয়দপুর উপজেলা জামায়াত শিবিরের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। সৈয়দপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পৃথকভাবে উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানান।