ক্লান্তি ভুলে সৈকতে ভ্রমণপিপাসুরা
কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে খালি নেই হোটেল-মোটেল
প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে শাহরিয়ার, রুমেল ও রুমোসহ ২০ বন্ধু মিলে ঘুরতে এসেছেন কক্সবাজার। সঙ্গে আছেন তাদের পরিবারও। টানা ছুটি পেয়ে একটু আনন্দ করতে তারা ছুটে বেড়াচ্ছেন সমুদ্র সৈকতে। তাদের মতো অনেকেই দীর্ঘ ক্লান্তি ভুলতে বেড়াতে এসেছেন এখানে। আর সেই সঙ্গে পুরানো রূপে ফিরেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত দুইমাস ঘরবন্দি থাকা লোকজন বেড়াতে বেরিয়েছেন। দুর্গা পূজার ছুটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ সৈকতে নেমেছে পর্যটকের ঢল।
এদিকে, শুক্র ও শনিবার এই দুই দিন সবগুলো হোটেলে শতভাগ বুকিং রয়েছে। নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
এবারের দুর্গাপূজার সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলে চার দিনের লম্বা ছুটি। আর এই ছুটির সময়টা পরিবার নিয়ে পর্যটকরা ছুটে যান বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। তেমনি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতও মুখরিত হয় পর্যটকে।
সরেজমিন দেখা যায়, তিল ধারণের ঠাঁই নেই সৈকতে। সাগরতীরে শুধু পর্যটক আর পর্যটক। নোনাজলে সব বয়সের মানুষ মেতেছে আনন্দ-উলস্নাসে। সেইসঙ্গে প্রিয় মুহূর্তগুলো উপভোগ করছেন প্রিয়জনের সঙ্গে।
শুক্রবার সকাল থেকেই সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য ছিল। টানা ছুটিতে সৈকতে এসেছেন লক্ষাধিক পর্যটক। উত্তাল সমুদ্রে গোসল, বালুচরে দৌড়ঝাঁপের পাশাপাশি তারা ছুটে বেড়াচ্ছেন জেলার পর্যটন পলস্নীগুলোতে।
সৈকত ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়ানগর পাটুয়ারটেকসহ সবগুলো পর্যটন স্পটে ব্যাপক সমাগম। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর এখন এসব এলাকা।
দিনাজপুর থেকে এসেছেন নাহিদা, সুমি ও ফয়সাল। তারা বলেন, কাজের চাপসহ সব ক্লান্তি ভুলে এখানে সময় পার করছি আমরা।
কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক রুবেল হোসেন বলেন, 'অনেকদিন ধরে ঘরবন্দি ছিলাম। তার মধ্যে পার্বত্য এলাকাগুলোতে ভ্রমণ নিষিদ্ধ আছে। তাই পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে আসলাম। তবে মানুষের ভিড় বেশি হওয়ায় একটু অস্বস্তিবোধ করছি।'
আরেক পর্যটক ফয়সাল আরেফিন বলেন, 'এই বছর সবচেয়ে বেশি লম্বা ছুটি পেলাম। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজার আসলাম। খুব ভালো লাগছে।'
রোহান নামে আরেক পর্যটক বলেন, 'সকালে বাস থেকে নেমেছি। নামার পর থেকে হোটেল খুঁজছি। কিন্তু সব বুকিং বলছে। কী করব, বুঝতে পারছি না।'
টু্যর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এসএম কিবরিয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'আমাদের মাধ্যমে অনেকেই এসেছেন কক্সবাজারে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভ্রমণ বাতিল করে অনেক পর্যটক এখন কক্সবাজারে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করার কারণে কক্সবাজারে বেড়ে গেছে পর্যটকের আগমন। তবে সেন্টমার্টিন যেতে পারলে আমাদের বুকিং আরও বেড়ে যেত।'
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ রোড হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মৌখিম খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'শুক্র ও শনিবার সবগুলো হোটেলের শতভাগ বুকিং হয়েছে। বৃহস্পতিবার ও রোববারের বুকিং কিছুটা কম। তবে সবমিলিয়ে ভালো ব্যবসা হবে এবার।'
হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, 'কক্সবাজারে সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। এর মধ্যে স্টার মানের হোটেল রয়েছে অর্ধশত। এসব স্টার মানের হোটেলে শতভাগ বুকিং রয়েছে।'
কক্সবাজার রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, 'আমাদের প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। অনেকদিন পর সবগুলো রেস্টুরেন্ট খুলে ব্যবসা করছে। মন্দার কারণে আমাদের অনেক রেস্টুরেন্ট এতদিন বন্ধ ছিল। আশা করি, এখন থেকে ব্যবসা ভালো হবে।'
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, 'আমাদের ব্যবসা এখন থেকে আলস্নাহর রহমতে ভালো হবে। এবারের ছুটিতে ভালো বুকিং পেয়েছি আমরা সবাই। আশা করি, অতীতের লস কেটে উঠতে পারবো।'
তারকা হোটেল ওসান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, 'দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। নিয়মিত ব্যবসা না থাকলে ঋণের ওপর প্রতিষ্ঠান চালানো হাতি পোষার মতো। ২০১২ সাল থেকে কোনো না কোনো কারণে ভরা মৌসুমেও পর্যটকশূন্য সময় কাটাতে হচ্ছে। তবে ভ্রমণপিয়াসীদের সেবা দিতে আমরা সবসময় প্রস্তুত থাকি। এবার চার দিনের ছুটিতে আমরা ৯৫ শতাংশ বুকিং পেয়েছি। এরপর ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং রয়েছে ৮০-৮৫ ভাগ রুম। মৃতপ্রায় পর্যটনে সতেজতা ফেরাতে আমরা অধিকাংশ ৪০-৪৫ শতাংশ এবং ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ শতাংশ ছাড়ও দিয়েছি। পর্যটকদের ভোজনে ভিন্ন স্বাদ দিতে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ উৎসবের আয়োজন রয়েছে। যদিও এর যাত্রা ছিল তিন দিনের। কিন্তু ভোজন রসিকদের জন্য ২০ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে। যে কেউ চাইলে স্বল্পমূল্যে আট ক্যাটাগরির ইলিশ রান্নার স্বাদ নিতে পারেন।'
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার আল আসাদ মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আমাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন। আমরা আইটির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ করছি। টহলগুলো অব্যাহত থাকবে সবসময়।'
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'পূজার টানা ছুটিতে কক্সবাজারের বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম হওয়ায়, জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেল থেকে বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো পর্যটক যাতে হয়রানি শিকার না হয়- বিষয়টি তদারকির জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।