ঢাকাসহ সারা দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির অভিন্ন নিয়ম মেনে কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে আগামী ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। সারা দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ভর্তি কার্যক্রমে বাধ্যতামূলকভাবে অংশ নিতে হবে।
এসব নির্দেশনার পাশাপাশি শুরু থেকে শেষপর্যন্ত ভর্তির প্রক্রিয়া কেমন হবে, তা তুলে ধরে বৃহস্পতিবার নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
নতুন শিক্ষাবর্ষ অর্থাৎ ২০২৫ সালের শুরুতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে এই নীতিমালা মেনে চলতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, যার ব্যত্যয় হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪ শিক্ষাবর্ষেও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়েছিল। নতুন শিক্ষাবর্ষের নীতিমালা আগেরটির মতোই।
২০২৫ সালে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির নীতিমালায় বলা হয়েছে, ছয় বছরের বেশি বয়সি শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিশুর সর্বনিম্ন বয়স পাঁচ এবং সর্বোচ্চ সাত বছর রাখা হয়েছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিশুর জন্ম তারিখ কেমন হবে, তার উদাহরণ দিতে গিয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে শিশুর সর্বনিম্ন জন্ম তারিখ হবে ১ জানুয়ারি ২০২০ এবং সর্বোচ্চ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭। অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ সাল থেকে ১ জানুয়ারি ২০২০ সাল পর্যন্ত জন্মগ্রহণকারী সব শিশুই প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির যোগ্য। তবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ক্ষেত্রে বয়স পাঁচ বছর পর্যন্ত শিথিল থাকবে।
ভর্তির আবেদনের সঙ্গে শিশুর জন্মসনদ দিতে হবে, যা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তির বয়স প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার বয়সের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী ঠিক করা হবে।
প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি শাখায় ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নিতে পারবে না কোনো বিদ্যালয়। তবে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে সব শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যাবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
তিন পর্যায়ের কমিটি: এদিকে, ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ঢাকা মহানগরের স্কুলগুলোর জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের কমিটি এবং জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের ও উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি থাকছে। এসব কমিটির সব সদস্যের যোগ্যতাও নীতিমালায় বলে দেওয়া হয়েছে।
\হকেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল লটারির তারিখ ও সময় এবং আবেদন ফি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ নির্ধারণ করে দেবে এবং বিজ্ঞাপন বা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা প্রকাশ করবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা 'ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটি' এর নির্ধারণ করে দেওয়া তারিখ ও সময় অনুযায়ী অনলাইনে আবেদন করতে পারবে। ওই কমিটি কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি-সংক্রান্ত কার্যক্রমও পরিচালনা করবে।
স্কুল নির্বাচন যেভাবে: নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভর্তির জন্য একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ পাঁচটি স্কুল পছন্দ করতে পারবে। তবে যেসব স্কুলে প্রভাতী ও দিবা শাখা রয়েছে সেগুলোতে দুই শিফটই পছন্দ হিসেবে নির্বাচন করলে সে ক্ষেত্রে দুই শিফটকে দুই স্কুল হিসেবে গণ্য করা হবে।
সংরক্ষিত আসন: সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আসন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যাদের জন্য রাখা হয়েছে ৫ শতাংশ।
এ ছাড়া ক্যাচমেন্ট এরিয়া অর্থাৎ বিদ্যালয়সংলগ্ন নির্দিষ্ট এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ, ষষ্ঠ শ্রেণির ক্ষেত্রে ষষ্ঠ শ্রেণির মোট আসনের ১০ শতাংশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ২ শতাংশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দপ্তর-সংস্থায় কর্মরতদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ, যজম ভাই-বোনদের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ, সহোদর-সহোদরাদের জন্য ২ শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে যমজ পাওয়া না গেলে সহোদর-সহোদরাদের দিয়ে আসন পূরণ করা এবং একইভাবে সহোদর-সহোদরা না পেলে যজমদের দিয়ে আসন পূরণ করার কথা বলা হয়েছে। তবে শর্তটি কোনো দম্পতির তিন সন্তানের জন্য প্রযোজ্য হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তানরা আগের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে সংকুলান সাপেক্ষে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ আসন রাখতে বলা হয়েছে নতুন নীতিমালায়।
সংরক্ষিত সব আসনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক, যা ডিজিটাল আবেদন যুক্ত করতেও নির্দেশনা হয়েছে।
অপেক্ষমাণ তালিকা: ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠানের আগে নির্বাচিত কারিগরি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুত করা সফটওয়ারের যথার্থতা সরকার স্বীকৃত অন্য একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাচাই করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র সংরক্ষণ করতে হবে।
লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর তালিকা তৈরির পাশাপাশি শূন্য আসনের সমান সংখ্যক অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীর তালিকা তৈরি করতে হবে। ভর্তি কমিটির নির্ধারিত তারিখে নির্বাচিত শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ক্রমানুসারে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রকাশিত অপেক্ষমাণ তালিকার ক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। শিক্ষাবর্ষের কোনো সময়ে আসন শূন্য হলে প্রকাশিত অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ক্রমানুসারে ভর্তি করে আসন পূরণ করতে হবে।
বিদ্যালয়ের অপারগতার ক্ষেত্রে: নীতিমালা অনুযায়ী, যৌক্তিক কোনো কারণে সরকারি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় অনলাইন ভর্তি কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত হতে না পারলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল লটারি প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। তবে সে ক্ষেত্রে ডিজিটাল লটারির দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
ফি নির্ধারণ ও আদায় করা ফি ভাগাভাগি: ভর্তির আবেদনের তারিখ ও ফি সম্পর্কে পরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়ার কথা হয়েছে, যা কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
তবে ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে আদায় করা ফি ভাগাভাগির বিষয়টি নীতিমালায় পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় পাবে ৮৫ শতাংশ, সংশ্লিষ্ট ভর্তি কমিটি পাবে ১০ শতাংশ এবং বাকি ৫ শতাংশের ২ শতাংশ মন্ত্রণালয় এবং ৩ শতাংশ অধিদপ্তর পাবে।