আলোচনা সভায় নজরুল ইসলাম খান
গুজব ছড়িয়ে স্বৈরাচারের দোসররা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে
প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ষড়যন্ত্রকারী থেমে নেই। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে বলেই মনে করার কারণ নেই, স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের দোসররা পালিয়ে গেছে। তারা আছে। নানা রকম গুজব ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে, নানা রকম বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। এজন্য হুঁশিয়ার থাকতে হবে, সাবধান থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক এসব কথা বলেন। শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের ৩৫তম মৃতু্যবার্ষিকী উপলক্ষে '৯০-এর জেহাদ স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর ছাত্রদল নেতা জেহাদ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। জেহাদের লাশ ছুঁয়ে তৎকালীন ছাত্রনেতারা শপথ নেন স্বৈরাচার এরশাদকে হঠানোর। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বরে ক্ষমতা ছাড়েন এরশাদ। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর রাজউক এভিনিউয়ের জেহাদ স্কয়ারে স্মৃতিস্তম্ভে বিএনপির পক্ষ থেকে আমানউলস্নাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, নাজিমউদ্দিন আলমসহ নেতাকর্মী পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
আলোচনা সভায় নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, 'আমাদের মনে রাখতে হবে, ওদের (পতিত আওয়ামী লীগ) পক্ষে দেশে-বিদেশে শক্তি আছে, ওদের অনেক টাকা-পয়সা আছে, তারা নানাভাবে চেষ্টা করতে পারে আমাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সেটা যেন করতে না পারে। কারণ মনে রাখতে হবে শহীদ জেহাদ থেকে আরম্ভ করে এর আগের এবং পরের যারাই আমাদের ভাইবোন শহীদ হয়েছেন, যারাই আমাদের ভাইবোন গুম হয়েছেন তাদের রক্ত কিংবা তাদের স্মৃতির প্রতি আমাদের যাই আছে এই দায় আমাদের পরিশোধ করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'আমরা যারা বেঁচে আছি আমাদের
দায়িত্ব হলো শহীদের স্মৃতি মনে রাখা এবং যা তারা চেয়েছিলেন যার জন্য জীবন দিয়েছেন সেটা অর্জন করা। আর সেই অর্জন করার পথে যে কোনো বাধা আসবে সেই বাধাকে আমাদের অতিক্রম করতে হবে। অতিক্রম করতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে।'
নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'এমনও আছে যাদের আমরা হয়তো চিনতে ভুল করতেছি। মনে হচ্ছে আমাদের পক্ষে। ওই লোকগুলো আমাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করার মতো সেস্নাগান দেয়, অনৈক্য সৃষ্টি করার মতো কথা বলে যাতে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই করেছে যারা বা যে শক্তি তাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। আরেকটা উদ্দেশ্য আছে তাদের। তারা জানে, এদেশের জনগণের মন-মানসে বিএনপির অস্তিত্ব এতোই প্রসারিত, এতোই গ্রথিত হয়ে আছে যে, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের সম্ভাবনা খুব কম। অতএব বিএনপিকে হেয় করা যায় কিভাবে, বিএনপির জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করা যায় কিভাবে, বিএনপির দুর্নাম করা যায় কিভাবে এরকম ষড়যন্ত্রে কেউ কেউ লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করছে।'
কোনো দল বা জোটের নাম উলেস্নখ না করে তিনি বলেন, 'আমরা সবাইকে অনুরোধ করব, আমরা পরস্পর শত্রম্ন নই। আসুন আমরা পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী হই। আপনি আপনার কথা বলেন, আমি আমার কথা বলি। আপনার অতীতও জনগণ জানে, আমার অতীতও জনগণ জানে আগামী দিনে যখন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে জনগণ নির্ধারিত করবে কাকে তারা তাদের কল্যাণের জন্য দায়িত্ব দেবে আগামী দিনের সরকার পরিচালনার। কিন্তু সেটা না করে মিথ্যা কথা বলা, অন্যায়ভাবে সমালোচনা করা আলস্নাহ পছন্দ করে না।'
নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'দুর্গা উৎসব চলছে। আমাদের দায়িত্ব যাতে সেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদেরও আছে। কারণ কিছু মানুষ আছে যারা চক্রান্ত করে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আমাদের দেশের বদনাম করার চেষ্টা করবে।'
নব্বইয়ের ডাকসুর ভিপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউলস্নাহ আমানের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নব্বইয়ের সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে আসাদুজ্জামান রিপন, সালাহউদ্দিন আহমেদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, কামরুজ্জামান রতন, খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান আসাদ, মীর সরাফত আলী সপু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, ছাত্রদলের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রাকিব ও শহীদ জেহাদের বড় বোন চামেলী মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।