দেশত্যাগ করতে পারেন রাতের ভোটের কুশীলব হেলাল উদ্দিন!

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

জাহাঙ্গীর আলম
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনসহ সব সদস্য মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে 'ফ্যাসিস্ট' আওয়ামী সরকারের সময়কালে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন তথা রাতের ভোটের কুশীলব সাবেক নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ। সংশ্লিষ্টদের ধারণা তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে যে কোনো সময় দেশত্যাগ করতে পারেন। সাবেক সচিব হেলাল উদ্দিনের জন্ম ১৯৬৩ সালের ২৩ মে কক্সবাজার জেলার ঈদগা উপজেলায়। তিনি ১৯৮৮ সালে ফেব্রম্নয়ারিতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। তিনি সহকারী কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, মেয়রের একান্ত সচিব, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ এই কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের সচিব থাকাকালে রাতের ভোটের আয়োজন করে ফ্যাসিস্ট সরকারকে মসনদে আসীন করার অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। তিনি নির্বাচন কমিশনের সচিবের দায়িত্ব পালনকালে কোর্স কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য নিয়মবহির্ভূতভাবে পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন- যা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি। এছাড়া তিনি তৎকালীন উপজেলা নির্বাচনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বক্তৃতা বা দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়েছিলেন। যদিও নির্বাচন কমিশনের একজন সচিব হিসেবে ওই প্রশিক্ষণে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেওয়া তার রুটিন দায়িত্ব। কিন্তু তার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ নেওয়া কতটুকু যৌক্তিক সুশীল সমাজের কাছে বা জাতির কাছে বোধগম্য হয়নি। এদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন বাতিল, হাজার কোটি টাকার ইভিএম ক্রয় ও মেরামতের নামে লুটপাট করে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব থাকাকালীন অবৈধভাবে অনেক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বেআইনি পন্থায় বহিষ্কার ও পদ স্থগিত করার আদেশ দেন তিনি। নিজ এলাকায় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের অভিপ্রায়ে কক্সবাজার জেলার একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ ও কতিপয় পেশিশক্তিদারীদের পোষণ করতেন তিনি। কক্সবাজার পৌরসভার পানি শোধনাগার নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ, দোহাজারী হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণসহ কক্সবাজার জেলার উন্নয়নের নামে নানা প্রকল্প গ্রহণ করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোকজন ও সিন্ডিকেট মিলে হাতিয়ে নেয় হাজার কোটি টাকা। এ ঘটনা উদ্ঘাটন করার কারণে চাকরিচু্যত হন দুদকের কর্মকর্তা উপসহকারী পরিচালক শরীফুল ইসলাম। এছাড়া তিনি অবসর গ্রহণের মাত্র একদিন আগে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ ব্যবহার করে ইউরোপে দশ দিনের স্টাডি টু্যরে গিয়েছিলেন, যা বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের কাছে একটি অস্বাভাবিক বিষয় এবং এটি ছিল সম্পূর্ণ অনৈতিক ও সরকারি তহবিলের অপব্যয়। সরকারি চাকরি হতে অবসর গ্রহণের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য নামামুখী প্রচেষ্টা চালিয়ে কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় নানা কৌশলে ২০২৩ সালের ১১ মে ভাগিয়ে নেন পিএসসির সদস্যের পদ। পিএসসির এই সদস্যকে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এ সদস্য গ্রেপ্তার এড়াতে যে কোনো সময় দেশত্যাগ করতে পারেন।