কদমতলির ফুটপাত-সড়কজুড়ে নির্মাণসামগ্রী, দেখার নেই কেউ

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

মাসুম পারভেজ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
কেরানীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের লিঙ্ক রোড কদমতলি গোলচত্বর এলাকায় সড়ক দখল করে এভাবেই নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে -যাযাদি
রাজধানীর কেরানীগঞ্জের সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের লিঙ্ক রোড কদমতলি গোলচত্বর। এমনিতেই প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে ব্যস্ততম এ সড়কে। তার ওপর মূল সড়কটি দখল করে পাথর, ইট, বালুসহ নির্মাণসামগ্রী রেখে ভবন মার্কেট নির্মাণকাজ করছেন দ্বীন ফার্নিচারের মালিক শামসুল হক। ফলে এ সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে ও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কেরানীগঞ্জ উপজেলাবাসীসহ ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের চলাচলরত দূরপালস্নার যানবাহন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসব নির্মাণসামগ্রী সড়কের ওপর রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হলেও তা দেখার কেউ নেই। স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক আহমেদ, রশিদ গাজি, কামু হোসেন জানান, আইন অনুযায়ী সড়কে ইট, বালু, সিমেন্ট ও পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী রাখা বেআইনি। কিন্তু তারপরও এ বিধান কেউ মানছেন না। কদমতলিতে দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলে আসলেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো জোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলেও স্থানীয়দের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। পথচারী আফরোজা চুমকি বলেন, 'কেরানীগঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট কদমতলি গোলচত্বর এলাকায় তানাকা ফিলিং স্টেশন ও শামসুল হক সড়ক ও ফুটপাত দখল করে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণসামগ্রী রেখে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে মূল সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। শুধু তাই নয়, মাঝেমধ্যে এ কারণে ফাঁকা সড়কে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। এরপরও নির্মাণাধীন ভবনের মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।' তিনি বলেন, 'আগে কম থাকলেও বর্তমানে কেরানীগঞ্জের বেগুনবাড়ি, কদমতলি ও চুনকুটিয়া-হিজলতলাসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে সড়কে নির্মাণসামগ্রী রাখা হচ্ছে, যা দুঃখজনক।' মোটরসাইকেল চালক শাকিল হোসেন বলেন, 'অনেক দিন ধরেই সড়কের ওপর পাথর, বালু, ইট ও কংক্রিট রেখে ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। যানজট লেগেই থাকে।' রিকশাচালক নজরুল ইসলাম বলেন, 'সড়ক দখল করে দিনভর কাজ করছেন তানাকা ফিলিং স্টেশন ও শামসুল হক মালিকরা। এক জায়গায় নয়, কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে এই চিত্র। জিনজিরা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিমু বলেন, প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাই। সড়কে বালু, ইট, ইটের খোয়া ও ফুটপাতে রডের স্তূপ থাকায় পথ চলতে খুব বেগ পেতে হয়।' মঙ্গলবার সড়কে গিয়ে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জ উপজেলার প্রাণকেন্দ্র কদমতলি গোলচত্বর সড়কের ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পশ্চিম দিকের মার্কেটটির ভবন নির্মাণ করছেন ব্যবসায়ী শামসুল হক। এ সড়কের একদিকে বাবুবাজার, দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু, অপরদিকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক লিঙ্ক রোড এবং এর মাঝে গোলচত্বর থেকে তৃতীয় একটি সড়ক যুক্ত হয়েছে গুলিস্তান-বান্দুরা আঞ্চলিক মহাসড়ক। কিন্তু নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ইট, ভরাট বালু, সিলেকশন বালু, কংক্রিট, বোল্ডার ভাঙা পাথর, রড ফুটপাতে ইত্যাদি সড়কের ওপর মজুদ করে রেখেছে। এতে ওই সড়কে দূরপালস্নার যানবাহনসহ গোলাম বাজার সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ওইসব নির্মাণসামগ্রীর কারণে পথচারীরা ফুটপাত দিয়েও হাঁটতে না পারায় যানজটের মধ্যে গাড়ির মাঝের ফাঁকা দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে তাদের।' ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের প্রচেষ্টা বাস ড্রাইভার আব্দুল ছালাম বলেন, 'সবসময় এ পথ দিয়েই যাতায়াত করি। এমনিতেই এ সড়কটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর একটি, যানজটও লেগে থাকে প্রায় সবসময়। তার ওপর আবার সড়ক দখল করে এসব বালু, ইট ও কংক্রিট রাখার কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।' ভ্যানচালক আনারউলস্না বলেন, 'কি বলব, আমরা গরিব মানুষ। রাস্তার ওপর মালামাল রেখে সড়ক আরও ছোট হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রায়ই রিকশা-প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।' এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া বলেন, 'রাস্তা বা সড়ক দখল করে নির্মাণসামগ্রী রাখার কোনো সুযোগ নেই। ভবন নির্মাণ মালিকের বিরুদ্ধে দ্রম্নত সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'