অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জনগণের এখনো কোনো অসন্তোষ না থাকলেও তারা গত দুই মাসে কিছুই সংস্কার করতে পারেনি বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, জনগণের দাবি শিগগিরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে রোডম্যাপ দিতে হবে। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করলেই জনগণ বুঝতে পারবে এই অন্তর্র্বর্তী সরকার ওয়ান ইলেভেনের সরকার নয়। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে আবারও রাজনীতি করতে দিলে দেশ পিছিয়ে যাবে। শেখ হাসিনা খুব দূরে নয়, অনেক কাছে। তাই আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
দেশ হবে 'জলস্নাদের উলস্নাসভূমি' :এদিকে, পতিত স্বৈরাচারের পুনর্বাসনে বাংলাদেশ 'জলস্নাদের উলস্নাসভূমি' হবে মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 'যারা এতদিন গুম-খুন আর আয়নাঘরের সংস্কৃতি তৈরি করেছিল, তারা যদি পুনর্বাসন হয়- তাহলে এ দেশে আর মানুষ বসবাস করতে পারবে না। এই দেশ হবে জলস্নাদের উলস্নাসভূমি। এখানে গণতন্ত্র, কথা বলা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা চিরদিনের জন্য গোরস্তান হয়ে যাবে, গোরস্থানে চলে যাবে।'
সোমবার রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, 'কেউ কেউ যখন স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের কথা বলে, তখন বিপদজনক বার্তা দেয় জনগণের কাছে। যখন কোনো উপদেষ্টা বলেন, তাদেরকে নিজেদের ঘর গোছানোর জন্য, সেটি অত্যন্ত বিপদজনক বার্তা দেয়।'
স্বৈরাচারের প্রশ্নে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'এখনো যারা গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করছেন, আন্দোলন এবং বিপস্নব জুলাই-অগাস্টে এডভাইজার হচ্ছে, বিভিন্ন পদে যাচ্ছেন; তারা যখন এই ধরনের বার্তা (আওয়ামী লীগের ঘর গোছানো উচিত) দেন, তখন এটা সাংঘাতিক ধরনের মরণঘাতী বার্তা। এটা হতে পারে না।'
রিজভী বলেন, 'আজকে যারা বিভিন্ন জায়গায় সেই স্বৈরাচার, গুম-খুন, আয়নাঘরের সংস্কৃতি চালু করেছিল; তারা গণতন্ত্রকামী মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে সেখানে (আয়নাঘর) বছরের পর বছর আটকিয়ে রেখেছিল, তাদেরকে হাত-পা পঙ্গু করে দিয়েছে। যাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে, সেই সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে কাউকে গুলশানে, কাউকে গুলিস্তানে, কাউকে মিরপুরে, কাউকে আজিমপুরে সেইসব ঘাপটি ধরা পুলিশ কর্মকর্তাদের সেখানে রাখা হয়েছে। এটাই যদি উদ্দেশ্য হয় এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের, তাহলে ছাত্র-জনতার এই আত্মত্যাগের কী হবে?'
নতুন পররাষ্ট্র সচিবকে নিয়ে প্রশ্ন
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, 'আমরা শুনতে পাচ্ছি, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দেখছি যে- নানা কায়দায় সরকারে ঘাপটি মারা স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী দোসরদের পুনর্বাসন করছে। কালকেও বলেছি, আজকেও বলি, একজন রাষ্ট্রদূত কাতারে ছিলেন, কাতারে কারো (প্রবাসী) যদি ভিসার মেয়াদ শেষ হতো, সেগুলোকে তিনি নবায়ন করতেন না। তিনি (রাষ্ট্রদূত) খবর নিতেন ওই সব লোক কোন দল করে, কাদের সমর্থক? কারণ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অধিকাংশ প্রবাসী বিএনপির সমর্থকৃতদেরকে তিনি (রাষ্ট্রদূত) নানাভাবে হয়রানি করেছেন, ভিসা নবায়ন করেননি। সেই লোককে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে বলে শুনতে পারছি।'
তিনি প্রশ্ন রাখেন, 'তাহলে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার কাদেরকে পুনর্বাসন করছেন? যারা জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাকতা করেছে, যারা শহীদের লাশকে আজকে অপবিত্র করছে, শহীদের আত্মদান ও রক্তকে যারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে তাদেরকে?'
রিজভী বলতে থাকেন, 'এই অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে আমরা শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি- তাকে তো এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। তার প্রতি জনগণের যে আস্থা, সেই আস্থা যাতে ফলপ্রসূ হয়, তাকে তো সেটা দেখতে হবে। কারা কাতারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র সচিব বানাচ্ছেন? এভাবে বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মারা ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। একটা সরকারে বিভিন্ন ধরনের লোক থাকতে পারে, নিরপেক্ষ লোকও থাকতে- যারা কাজ করবেন। কিন্তু যারা শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্টকে সমর্থন করে বিরোধীদল দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে, তাদের যদি আজকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ পায়, তাহলে এই সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হবে।'
অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের তাগাদা দিয়ে তিনি বলেন, 'দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য যেসব আইন-কানুন দরকার, সেগুলো এখনো করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন গঠন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ আরো যেসব সংস্কার কাজ আছে, সেগুলো এখনো করা হয়নি; তার আগে যদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে একজন বিতর্কিত এবং শেখ হাসিনার একজন সহযোগীকে বসানো হয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ওইরকম বিতর্কিত ব্যক্তিদের বসানো হয়- তাহলে এই দেশ, এই দেশের জনগণ এবং বিপস্নবে দেড় হাজারেরও বেশি শহীদদের অবমাননা করা হবে।'
এসময় বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পারভেজ রেজা কাকন, সহ প্রচার সম্পাদক আসাদুল করীম শাহিনসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রোববার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ শুরু করে বিএনপি।