দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃতু্যও। অসময়ে ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে এডিস মশা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১২১৮ জন; এ নিয়ে এ বছর মশাবাহিত এ রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৩৭ হাজার ৮০৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুইজন। তাদের নিয়ে ডেঙ্গুতে মৃতু্যর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৮ জনে।
এদিকে, সোমবার বিকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম সাংবাদিকদের বলেন, 'ডেঙ্গু ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তবে আমাদের সব জায়গায় অ্যালার্ট করে দেওয়া আছে। যাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো যায়।'
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত ভর্তি নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৪৫ জন, ঢাকা বিভাগে ২৩৪ জন, ময়মনসিংহে ২১ জন, চট্টগ্রামে ২২১ জন, খুলনায় ৯১ জন, রাজশাহী বিভাগে ৬৯ জন, রংপুর বিভাগে ৩৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১০২ জন এবং সিলেট বিভাগে ২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩৩৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ১৭৫৫ জন; আর ১৬২৪ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি।
এ বছর ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২১ হাজার ৫১০ জন ঢাকার বাইরের রোগী। ঢাকার দুই মহানগর এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ২৯৮ জন।
গত এক দিনে যে দুজনের মৃতু্য হয়েছে তাদের মধ্যে একজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং একজন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
সেপ্টেম্বর মাসে এ বছরের সবচেয়ে বেশি ১৯ হাজার ২৪১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। এ মাসেই সবচেয়ে বেশি ৮৩ জনের মৃতু্য হয়েছে।
অক্টোবরের প্রথম সাত দিনে ৬৮৭০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃতু্য হয়েছে ২৫ জনের।
এর আগে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। ফেব্রম্নয়ারি মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩৩৯ জন, যাদের মধ্যে মৃতু্য হয়েছে তিনজনের।
মার্চ মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১১ জন; যাদের মধ্যে ৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। এপ্রিল মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০৪ জন, যাদের মধ্যে মৃতু্য হয়েছে দুইজনের। মে মাসে ৬৪৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃতু্য হয়েছে ১২ জনের। জুন মাসে ৭৯৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃতু্য হয়েছে ৮ জনের।
জুলাই মাসে ২৬৬৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদের মধ্যে ১২ জনের মৃতু্য হয়। আগস্টে ৬৫২১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, যাদের মধ্যে ২৭ জনের মৃতু্য হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতু্যর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৭০৫ জনের মৃতু্যও হয় ওই বছর।
এদিকে, সোমবার বিকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের বলেন, 'ডেঙ্গু ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তবে আমাদের সব জায়গায় অ্যালার্ট করে দেওয়া আছে, যাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো যায়।'
তিনি বলেন, 'গত বছর এ সময়ে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৯৮৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে সচেতন করতে। বিভিন্ন জায়গায় সবার সঙ্গে কথা বলছি। যেন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।'
হাসপাতালগুলোতে নানা রকমের অবৈধ কাজ করে, এরকম অনেক লোক রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, 'দেশের হাসপাতালগুলোর ভেতর থেকে নানা অভিযোগ আছে। এর মধ্যে একটি হলো একটি গোষ্ঠী নানান অবৈধ কাজ করে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। সরকারি ওষুধ বিক্রি করার অভিযোগ ছিল, সেগুলো যাতে না করে সে বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপর চাপ কমাতে আমরা চেষ্টা করছি। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ব্যবহার বাড়ানো... আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের আরও বেশি প্রশিক্ষণ দেওয়া, নার্সদের আচরণগত প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা; এই কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের গত কয়েক মাস বেতন হচ্ছে না, তাদের বেতন দেওয়ার জন্য যে প্রস্তাব ছিল সেটা পাস না হওয়ায় তারা তিন মাস বেতন পাচ্ছেন না। আমি আগামী ক্যাবিনেটে সেটা নিয়ে যাবো। যাতে তাদের বেতনের ব্যবস্থা করা যায়। আমাদের নানাবিধ সমস্যা আছে, সেগুলো ধীরে ধীরে সমাধানে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ১৪ জন করে চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কোথাও তিনজন আবার কোথাও চারজন চিকিৎসক রয়েছেন। আবার চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই। এ রকম নানা সমস্যা আছে। ধীরে ধীরে আমাদের সমাধান করতে হবে।