রূপপুর বিদু্যৎকেন্দ্র আওয়ামী লীগ সরকারের সব থেকে বড় সাদা হাতি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম।
শনিবার চট্টগ্রাম নগরের হোটেল আগ্রাবাদে 'গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ' শীর্ষক অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচক হিসেবে বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এর আয়োজনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি বিভাগে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেছে সংস্থাটি।
জ্বালানি ও বিদু্যৎ খাতের দুর্নীতি নিয়ে ড. মইনুল ইসলাম বলেন, রূপপুর বিদু্যৎকেন্দ্র সাবেক সরকারের সব থেকে বড় সাদা হাতি। আদানি গ্রম্নপের সঙ্গে চুক্তি সব থেকে বড় অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধন করেছে। নারীদের জন্য এক তৃতীয়াংশ আসন বরাদ্দ রাখতে হবে। বিগত সরকার দেশকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছে যার কারণে রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে।
সংবিধান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্যস্থাপন করার কথা উলেস্নখ করেন ড. মইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও ভোটের মাধ্যমে হওয়া কাম্য। সংবিধানকে দ্বিকক্ষীয় কাঠামোতে রূপান্তর করতে হবে। এছাড়াও সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। দুদককে সংস্কার এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান করতে হবে। স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা গেলে সংস্কারের অনেকটা পথ আগানো যাবে।
সংসদ বিষয়ক গবেষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, সংবিধান পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করার মাধ্যমে সংবিধানের সংস্কার করা সম্ভব। কারণ নির্বাচনের পর যে দল ক্ষমতায় আসে তাদের মধ্যে পরিবর্তন করার প্রবণতা থাকে। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার হলে সকল ব্যবস্থার সংস্কার হওয়া সম্ভব। সংবিধান সংস্কারের কাজটি সফল করার জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিলস্নুর রহমান বলেন, ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান না হলেও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। শেষে সরকার ব্যর্থ হতে পারে, তবে এটি সামগ্রিকভাবে জাতির ব্যর্থতা না। জনগণকে গণতান্ত্রিক দেশ গঠনে আশাবাদী এবং প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ থাকতে হবে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আইনজীবী, রাজনীতিক, শিল্পোদ্যোক্তা, নাগরিকসমাজ, গণমাধ্যমকর্মী, আধিকারকর্মী, ক্ষুদ্রউদ্যোক্তা, নারীসংগঠক, স্বেচ্ছাসেবীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবীরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সংস্কার বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত জানান।
প্রসঙ্গত, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক যা সুশাসন, দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের বিষয়ে গবেষণা ও মিডিয়া স্টাডি পরিচালনা করে। দ্রম্নত পরিবর্তনশীল জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য হলো শিক্ষাগত সম্প্রদায়, সরকার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ এবং উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে শাসনের মান উন্নত করা, বাংলাদেশের নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করা, দারিদ্র্য নিরসনের জন্য উপলব্ধ সম্পদের দক্ষ ও বিচক্ষণ ব্যবহার করার শর্ত তৈরি করা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, এবং বর্ধিত গণতন্ত্রীকরণ, অংশগ্রহণ এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা।