ডিবি কার্যালয়ে কোনো আয়নাঘর থাকবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মলিস্নক। এমনকি পুলিশের এই ইউনিটটিতে কোনো ধরনের ভাতের হোটেলও করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন ডিবিপ্রধান। তিনি বলেন, 'আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে আর কোনো আয়নাঘর থাকবে না। ডিবির কলঙ্কিত অধ্যায় শেষ করে সেটিকে পবিত্র করা হবে, যেখানে মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। সেখানে কোনো নায়ক-নায়িকা বা সেলিব্রেটিদের সময় কাটানোর জায়গা হবে না। থাকবে না কোনো ভাতের হোটেল। আসামি যেই হোক না কেন, সে বিচার পাবে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদেরও নির্যাতন করা হবে না। ডিবি অফিসের নাম শুনে আর যেন কেউ আতঙ্কিত না হয়, শুধু আসামিরাই যেন ভয় পায়। এভাবেই ডিবির কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে'।
তিনি আরও বলেন, 'পুলিশের অত্যন্ত সংকটকালে
আমাকে ডিবিপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ডিএমপি কমিশনারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বিগত সময়ের কিছু উচ্চাভিলাসী পুলিশ কর্মকর্তা সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। যে কারণে ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থান ও বিগত সরকারের পতনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়ে। অতীতে পুলিশ বাহিনীকে কোনো সময়ই এমন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আইজিপি ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কর্মতৎপরতায় ডিএমপির সব থানা ও ডিবির কার্যক্রম পুরোদমে সচল হয়েছে'।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, 'আমি যতদিন ডিবিপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করব, ততদিন ন্যায়নীতি, পেশাদারিত্ব ও সত্যতার মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব। যারা ভুক্তভোগী ও অসহায়, তাদের কথা শুনব। তাদের কিভাবে আইনগত সহযোগিতা করা যায় সেটি দেখব। ডিবির নাম শুনলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ডিবি শুধু অপরাধীদের জন্য আতঙ্কের নাম হবে। নিরাপরাধ মানুষের জন্য নয়। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই ডিবিকে। নতুন স্বাধীন বাংলাদেশে ডিবি অফিস হবে ভুক্তভোগীদের ভরসার জায়গা'।
তিনি জনগণকে উদ্দেশ করে বলেন, 'আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ডিবির কোনো সদস্য অনৈতিক ও অপেশাদার কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকলে, তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না'।
ঢাকাবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, 'শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজা। যা আগামী ৮ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। পূজা উপলক্ষে শারদীয় শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সারাদেশের মতো রাজধানীতে পূজায় থাকবে কঠোর নিরাপত্তা। ঢাকার প্রতিটি পূজামন্ডপে সাদা পোশাকে ডিবি সদস্যরা কাজ করছেন। নগরবাসীকে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত না হতে অনুরোধ করছি। সবাই আইন ও বিধি মেনে চলবেন। ডিবি সবসময় আপনাদের পাশে আছে। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন'।
তিনি আরও বলেন, প্রচলিত অপরাধের পাশাপাশি কিশোর অপরাধ, অনলাইন জুয়া, সাইবার ক্রাইম, অর্থনৈতিক অপরাধ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ, গুজবসহ নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জকে ডিবি সাহসিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করছে।
অনুষ্ঠানে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভুঁইয়া, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার-দক্ষিণ) সৈয়দ হারুন অর রশীদসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ছিলেন।