যাদের নির্দেশে নির্বিচারে গণহত্যা চালানো হয়েছে, তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতেই করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী।
শনিবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। 'জুলাই হত্যাকান্ডের বিচার, শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন, আহতদের চিকিৎসা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এ সমাবেশ করা হয়। সমাবেশ থেকে জানানো হয়, হত্যাকারীদের বিচার ও মামলা পরিচালনার জন্য সারাদেশে সাত সদস্যের আইনজীবী প্যানেল গঠন করা হয়েছে।
নাসিরউদ্দীন পাটয়ারী বলেন, 'বাংলাদেশের ছাত্ররা আরেকটা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যেসব দলের নেতাকর্মীরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল, তারাও নিজেদের দল গোছাতে ব্যস্ত। আওয়ামী সরকারের সংবিধান বাতিল করে দ্রম্নত নতুন সংবিধান করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে হবে। আর কোনো প্রতিহিংসা চাই না। আমরা অন্তর্র্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করব, যেন দ্রম্নত হত্যাকারীদের বিচার করা হয়।'
সমাবেশে শহীদ মোমিনুল ইসলামের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আমার ছেলে গত ১৯ জুলাই গুলশানে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। আমি কখনো ভাবতে পারিনি, আমি এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারব। আমার ছেলে আজ আমাকে
এখানে নিয়ে এসেছে। আমরা ছেলের জন্য আমি গর্ববোধ করি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমার ছেলের হত্যাকারীদের এখনো বিচার হয়নি। আমার ছেলে দেশের জন্য যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছে। আমি অন্তর্র্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, আমি যেন হত্যাকারীদের বিচার দেখে মরতে পারি।'
শহীদ মারুফ হোসেনের বাবা বলেন, 'আমি খেটে খাওয়া মানুষ। আমার ছেলে গত ১৯ জুলাই বাড্ডায় যখন পুলিশের গুলিতে আহত হয়, তখন তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার সময় পুলিশ গতিরোধ করে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আমার ছেলে মারা যায়। ডিবি পুলিশ আমার বাসায় যায়। আমাকে জামায়াত-শিবির বলে ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করে। দেশ স্বাধীনের পর আমি ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় সবাই পলাতক। আমি তাহলে কাদের কাছে বিচার চাইব। যেসব সমন্বয়কের ডাকে আমার ছেলে রাস্তায় জীবন দিয়েছে, সরকার পতনের পর তারা একটাবারও আমার খোঁজ নেয়নি। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই।'
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার গত কয়েক বছর ধরে দেশের মানুষের সঙ্গে অন্যায় করেছে। ভারতীয় গোলামির কারণে এখনো সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে। যারা শহীদ হয়েছে, তাদের পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসা দিতে হবে। কিন্তু দুই মাস পার হয়ে গেলেও আমরা কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। যারা জুলাই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত, তারা এখনো বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে যাচ্ছে। অন্তর্র্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, শত শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই বাংলাদেশ। শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করবেন না। যাদের কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে, সেসব সিন্ডিকেটের কালো হাত ভেঙে দিতে হবে।'
জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্য সদস্যরাও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।