সাইবার আইনে ১৪টি সংশোধন প্রস্তাব

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে অন্তর্র্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইনের ১৪টি সংশোধন প্রস্তাব এনেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এই সংশোধনীগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে এ সভায় আইনজীবী, সাবেক বিচারক, শিক্ষক, সাবেক শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণিপেশার সদস্যরা অংশ নেন। আইনের ৬০টি ধারার মধ্যে ১৪টিতে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সেটি চূড়ান্ত নয় উলেস্নখ করে আসিফ নজরুল বলেন, 'সবার মতামতের ভিত্তিতে এ সংশোধনী চূড়ান্ত করা হবে।' যেসব ধারায় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে তার প্রথমটি হলো ধারা ২-এর দফা 'প'। এই দফাটি সম্পূর্ণ রহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা আছে : (প) 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' অর্থ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ যাহা আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহিদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল।' এই ধারায় ২ (পপ) দফা নতুন সংযোজন করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, 'সরাসরি সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি' অর্থ সেই ব্যক্তি যিনি কোনো কাজ, যা অস্ত্র আইনে দন্ডনীয় অপরাধ দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বা হওয়ার ঝুঁকিতে ছিলেন।' ধারা ২-এর (ধ) 'মানহানি' অর্থ চবহধষ ঈড়ফব (অপঃ ঘড়. ঢখঠ ড়ভ ১৮৬০) এর ংবপঃরড়হ ৪৯৯-এ বর্ণিত ফবভধসধঃরড়হ- এই দফাটি সম্পূর্ণ রহিত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ধারা ৮-এর ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, (৩) উপধারা (১) ও (২) এর অধীন কোনো অনুরোধ প্রাপ্ত হইলে বিটিআরসি, উক্ত বিষয়াদি সরকারকে অবহিতক্রমে, তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা, ক্ষেত্রমত বস্নক করিবে। এখানে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে, পরিবর্তিত রূপ হলো - (৩) উপধারা (১) ও (২) এর অধীন কোনো অনুরোধ প্রাপ্ত হইলে বিটিআরসি, উপযুক্ত ক্ষেত্রে, উক্ত তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা, ক্ষেত্রমত বস্নক করিবে এবং তৎবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা বা না করার বিষয়টি সরকারকে অবহিত করিবে। ১৭ নম্বর ধারার উপধারা ২-এর দফা 'ক' ও 'খ'-এ পরিবর্তন করা হয়েছে। এখানে দন্ড পরিবর্তন করে কমানো হয়েছে। ২-এর 'ক' দফায় কারাদন্ড অনধিক ৩ বছরের স্থলে অনধিক ২ বছর এবং অর্থদন্ড অনধিক ২৫ লাখের স্থলে অনধিক ২০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়। ১৭ ধারার ২-এর 'খ' দফায় কারাদন্ড অনধিক ৬ বছরের জায়গায় অনধিক ৫ বছর এবং অর্থদন্ড অনধিক ১ কোটি টাকার জায়গায় ৫০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৮ ধারায়ও কারাদন্ড হ্রাস করা হয়েছে। উপধারা ২-এর দফা 'খ'-তে কারাদন্ড অনধিক ৩ বছরের জায়গায় অনধিক ২ বছর এবং উপধারা ৩-এ অনধিক ৩ বছরের স্থলে কারাদন্ড অনধিক ২ বছর করা হয়েছে। ধারা ১৯-এর উপধারা ২-এ কারাদন্ড হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে অনধিক ৭ বছরের স্থলে কারাদন্ড করা হয়েছে অনধিক ৫ বছর। ধারা ২০-এর উপধারা ২-এ অনধিক ৩ বছরের কারাদন্ড কমিয়ে অনধিক ২ বছর করা হয়েছে। ২১ নম্বর ধারাটি সম্পূর্ণ রহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ধারাটি হলো-২১। (১) যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণা চালান বা উহাতে মদদ প্রদান করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদন্ডে, বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদন্ডে, বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হইবেন। ২৫ ধারার উপধারা ১-এর 'ক' দফায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমান দফাটি হলো- (ক) ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এইরূপ কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যাহা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন; বা পরিবর্তিত রূপ হলো-(ক) ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এইরূপ কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, বা প্রেরণ করার হুমকি প্রদান করেন, যাহা আক্রমণাত্মক, ভীতি প্রদর্শন[*] কিংবা ব্যক্তি বা সামাজিক মর্যাদা হানিকর, অথবা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন বা প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করার হুমকি প্রদান করেন, বা ২৭ ধারার ২ উপধারায় কারাদন্ড ও অর্থদন্ড হ্রাস করা হয়েছে; অনধিক ১৪ বছর কারাদন্ডকে অনধিক ১০ বছর এবং অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদন্ডকে অনধিক ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে। ২৯ নম্বর ধারা সম্পূর্ণ রহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ধারাটি হলো-২৯। যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে চবহধষ ঈড়ফব (অপঃ ঘড়. ঢখঠ ড়ভ ১৮৬০) এর ংবপঃরড়হ ৪৯৯-এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির উক্তরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন। মামলা দায়ের সংক্রান্ত একটি ধারা ২৭ক যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে যেখানে বলা হয়-২৭ক। সরাসরি সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি, তাহার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ব্যতীত অন্য কেউ অত্র আইনের অধীনে মামলা দায়ের করিতে পারিবে না। ৫২ ধারার 'খ' দফায় কয়েকটি অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য কয়েকটি ধারা রহিত করার কথা বলা হয়েছে। (খ) ধারা ১৮-এর উপধারা (১) এর দফা (খ), ধারা ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১ ও ৪৬-এ উলিস্নখিত অপরাধগুলো অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য হবে; এবং এখান থেকে ধারা ২০ এবং ২৮ রহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ইকতেদার আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির, ইংরেজি দৈনিক দ্য ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অন্যতম ভুক্তভোগী খাদিজাতুল কোবরা আলোচনায় অংশ নেন। আলোচকরা সংশোধন প্রস্তাব আনা ধারাগুলোর ওপর আলোচনা করেন। তবে অধিকাংশ বক্তা এই আইনটি বাতিল করার দাবি জানান।