শরৎ উৎসবে সম্প্রীতির আহ্বান
প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
আশ্বিনের সকালে কথা, কবিতা, গানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শরৎ উৎসব উদ্যাপন করা হয়েছে। উৎসবে সত্য, সুন্দরের প্রত্যাশা নিয়ে শিল্পীরা গেয়েছেন সম্প্রীতির গান, নৃত্যশিল্পীদের নাচে ছিল প্রীতিবন্ধনে মিলনের বার্তা।
শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। সকাল সাড়ে সাতটায় যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পী মো. ইউসুফ খানের সরোদ বাদনে শুরু হয় উৎসব। ততক্ষণে বকুলতলায় এসে হাজির হয়েছে একদল শিশু-কিশোর, তাদের পোশাকেও লেগেছে শরতের রং।
সুরবিহারের শিল্পীরা শোনান 'ওগো শেফালি বনের মনের কামনা'; সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা 'দেখো দেখো দেখো শুকতারা আঁখি মেলি চায়' গানটি শোনান।
'এ কী অপরূপ রূপে মা তোমায়' নজরুলগীতিও গেয়ে শোনান তারা। সীমান্ত খেলাঘর আসরের শিশুরা পরিবেশন করে রবীন্দ্রসঙ্গীত 'আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়' গানটি। এ ছাড়া বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, শিল্পবৃত্তের শিশুরা, নির্ঝরিণী একাডেমি গান ও কবিতা শোনায় দর্শক-শ্রোতাদের।
উৎসবের একপর্যায়ে শিল্পীরা সমবেতভাবে গেয়ে শোনান চিরপরিচিত 'বাংলার মাটি, বাংলার জল' গানটি। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাহিম হোসেন চৌধুরী, প্রিয়াঙ্কা গোপ, অনিমা রায়, তানভীর আলম সজীব, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ। রফিকুল ইসলামের কণ্ঠে শোনা যায় জীবনানন্দ দাশের 'এখানে আকাশ নীল' কবিতাটি
শরৎ উৎসবের ঘোষণা পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার সুইট চৌধুরীসুর, তাল, ছন্দের আবাহনে উদযাপিত এই উৎসবের ঘোষণা পত্রে বলা হয়, 'প্রকৃতির সঙ্গে মানবের মিলনে জীবনের আনন্দরস খুঁজে পাওয়ার চিরন্তন শারদীয় উৎসবে এবার মিশে আছে বেদনার সুর।'
সুইট বলেন, 'আমরা সশ্রদ্ধভাবে স্মরণ করি নবপ্রভাতের স্বপ্নবহ ছাত্র-গণ-অভু্যত্থানে আত্মাহুতি দানকারীদের, ব্যথিত চিত্তে লক্ষ করি ঘৃণা অসহিষ্ণুতা ও হিংসার বিস্তারে দুর্ভাগ্যজনক মৃতু্য। বৈষম্যহীন মুক্ত স্বাধীন সম্প্রীতির সমাজের স্বপ্নবহ আন্দোলন জীবনে নানাভাবে পলস্নবিত হোক, সেই প্রত্যাশাও মিশে থাকে শরৎ-আবাহনে।'
শারদোৎসব মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির, জীবনের সঙ্গে মহাজীবনের, সমকালের সঙ্গে চিরকালের মেলবন্ধন রচনা করে বলে মন্তব্য করেন সুইট।
তিনি বলেন, 'বাংলার মাটির ও প্রকৃতির এমন উৎসব তাই নব-আনন্দে জেগে ওঠার বাণীমন্ত্র যেমন শোনায়, তেমনি আমাদের দায়িত্ববান করে তোলে প্রকৃতি-সংহারী পদক্ষেপ প্রতিরোধে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে, সেই সঙ্গে মানবসমাজ ও জীবনের চালচিত্রে বিভিন্নতার রং-রূপ-রস রক্ষা করে সম্প্রীতির জয়গান গাইতে।'
কথন পর্বে চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সুশান্ত অধিকারী বলেন, 'আমরা যারা গ্রামে বেড়ে উঠেছি, তারা শাপলার বিলে সাঁতার কেটেছি। কাশবনে ঘুরে বেড়িয়েছি। তাদের অনুভবে শরৎ ধরা দেয় অনন্যরূপে। শহরের শিশুদের কাছে হয়তো এই রূপ অচেনা। আমাদের অভিভাবকদের দায় রয়েছে, আমাদের সন্তানদের প্রকৃতির এই রূপ বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানানোর।'
বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, 'গ্রামে এখনো কিছু কিছু প্রকৃতির বৈচিত্র্য দেখা যায়। এই রূপ-বৈচিত্র্যের সঙ্গে আমাদের সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।'
সভাপতির বক্তব্যে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি নিগার চৌধুরী বলেন, বাংলার ছয়টি ঋতুর আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে, আলাদা বার্তা আছে। শরৎ ঋতুকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক। এই ঋতুতে আমাদের মাঠে নতুন ফসলের বার্তা আনে, যা ঘরে তুলে নবান্ন উৎসব করি। শুদ্ধ সুন্দর শুভ্রতায় এই শরৎ সবার জীবনে মঙ্গল বয়ে আনুক।