দেশের তিন জেলার সড়কে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন, জামালপুর শহরে ট্রাকের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালকসহ তিনজন ও নীলফামারী জেলায় পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২ জন। শুক্রবার সকালে ও বৃহস্পতিবার রাতে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন।
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল ও কালিহাতি (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান,
টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে কালিহাতী উপজেলার শোলাকুড়া নামক স্থানে শুক্রবার ভোরে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন নিহত ও ২৩ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহত দুইজন হলেন- টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৩) ও জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার মহিষ বায়ান গ্রামের মৃত আ. ওয়াজেদের ছেলে জিয়াউল (৩৫)।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মোহাম্মদ নান্নু খান স্থানীয়দের বরাতে জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা টাঙ্গাইল হয়ে ময়মনসিংহগামী ক্রাউন ডিলাক্সের একটি বাস টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে কালিহাতী উপজেলার বাংড়া ইউনিয়নের শোলাকুড়া নামক স্থানে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রম্নতগামী একটি মালবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় বাসটি পাশের খাদে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলে দুই ব্যক্তি নিহত এবং ২৫ যাত্রী আহত হন।
সংঘর্ষের খবরে স্থানীয় লোকজন, কালিহাতী ফায়ার সার্ভিস এবং এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে আহত ২৫ জনকে চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল পাঠায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও দুইজন মারা যান। আহত ২৩ জনকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে পাওয়া আহতরা হচ্ছেন- ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের মোবারকের ছেলে মন্নু মিয়া (২০), একই গ্রামের শেখ কলিম উদ্দিনের ছেলে রোহান উদ্দিন (১৮), জামালপুর সদর উপজেলার কান্দাইল গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে আসাদ (৩৬), একই জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার বাউমি গ্রামের মো. সোমর আলীর ছেলে রফিক (৩৫), একই উপজেলার কুচুলিয়া গ্রামের ফজলের ছেলে মো. সাগর (২৫), একই গ্রামের ওয়াজউদ্দিনের ছেলে সোলায়মান (৪০), মাদারগঞ্জ উপজেলার বেড়ামাটি গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে মশিউর (৩৫), একই জেলার মাদারগঞ্জ সদর উপজেলার মজিবরের ছেলে নুরনবী (২৫), সরিষাবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ী গ্রামের সাগরের স্ত্রী রাজিয়া (৩০), বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার ছোনপচা গ্রামের খায়রুলের ছেলে মাজেদ (৩০), টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ফয়েজপুর গ্রামের মৃত তুফান শেখের ছেলে ময়নাল শেখ (৬০), একই উপজেলার বিহালী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে জসিম উদ্দিন (৪০), একই জেলার ধনবাড়ী উপজেলা সদরের ধনবাড়ী গ্রামের মৃত জুলহাস উদ্দিনের ছেলে সেলিম (৪০), ঘাটাইল উপজেলার নলনা গ্রামের আ. বারেকের ছেলে খোকন (৩৫)। এছাড়া খলিলের ছেলে নাজির (২৮), রাজ্জাক (৩০)। এছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত ক্রাউন ডিলাক্স বাসের চালকও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্য চারজন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ায় তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এদিকে, ওই দুর্ঘটনার কারণে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে এলেঙ্গা থেকে সলস্না পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকালে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি রেকার দিয়ে সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মোহাম্মদ নান্নু খান জানান, নিহতদের মরদেহ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। পরিচয় পাওয়াসাপেক্ষে আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে, শুক্রবার সকালে জামালপুর শহরের বেলটিয়া টিউবওয়েল পাড় মোড়ে ট্রাকের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। সদর থানার ওসি ফয়সাল মো. আতিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- মেলান্দহের কাপাসহাটিয়া গ্রামের জয়নাল হোসেনের ছেলে ও ইজিবাইকটির চালক রোকন মাহমুদ (৪৫), শেখ সাদী গ্রামের মৃত আব্দুস সোবাহানের ছেলে মরিচ ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক (৫৩) ও জামালপুর বেলটিয়া কামিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান (৫৫)।
ওসি ফয়সাল জানান, সকালে জামালপুর-টাঙ্গাইল সড়কের বেলটিয়া টিউবওয়েলপাড় মোড়ে ঢাকা থেকে জামালপুরগামী একটি ট্রাক যাত্রীবাহী ইজিবাইককে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ইজিবাইকটি দুমড়েমুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। স্থানীয়রা দুজনকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার সময় তারাও মারা যান।'
খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিহতদের মৃতদেহ উদ্ধার করে। দুর্ঘটনার পর ট্রাকটি পালিয়ে গেছে, সেটিকে আটক করার চেষ্টা চলছে বলে জানান ওসি।
স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী জানান, বৃহস্পতিবার রাতে নীলফামারী পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। রাত ৯টার দিকে কিশোরগঞ্জ উপজেলা ভূমি রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে ও রাত ২টার দিকে সৈয়দপুর-নীলফামারী মহাসড়কের শিমুলতলী নামক এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- রংপুরের গংঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে কামরুজ্জামান (৪০) ও ডোমার পৌরসভার পশ্চিম চিকনমাটি ঘুন্টিপাড়া এলাকার মৃত আনন্দ বর্মণের ছেলে সুমন রায় (৩২)। কামরুজ্জামান ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) নামের একটি এনজিওর ফিল্ড সুপারভাইজার ও সুমন রায় ডোমার থানায় কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'কামরুজ্জামান নামের এক যুবক মোটর সাইকেলযোগে কর্মস্থল ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। উপজেলা ভূমি রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে দ্রম্নতগতিতে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে তার মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘাতক ট্রাক ও চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।'
নীলফামারী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর সাঈদ বলেন, 'রাত ২টার দিকে সুমন রায় নামের এক যুবক মোটর সাইকেলযোগে সৈয়দপুর থেকে ডোমারের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। সৈয়দপুর-নীলফামারী মহাসড়কের শিমুলতলী এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে একটি ট্রাকের সঙ্গে তার মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এরপর সেখানে তাকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ঘাতক ট্রাক ও চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।'