একটিতে হাসিনাসহ আসামি ২২
আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যায় ট্রাইবু্যনালে তিন অভিযোগ
প্রকাশ | ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে লক্ষ্ণীপুর, যাত্রাবাড়ী ও মিরপুর-১০ নম্বরে তিনজন শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে পৃথক তিনটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বৃহস্পতিবার ট্রাইবু্যনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর নিহতদের পরিবার এসব অভিযোগ করেন। এর মধ্যে লক্ষ্ণীপুর ও যাত্রাবাড়ীর অভিযোগ দুটিতে আইনি সহায়তা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, লক্ষ্ণীপুর ও যাত্রাবাড়ীর অভিযোগ দুটির একটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে, অপরটিতে পাঁচ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে দুটি অভিযোগেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে আসামি করা হয়েছে। সে হিসাবে দুই মামলায় মোট আসামি ২৬ জন।
কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ছাত্র-নাগরিকের অভু্যত্থানে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া দুই শহীদের পরিবার বৃহস্পতিবার জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে মামলা দায়ের করেছেন। আমরা শহীদ পরিবার দুটিকে মামলা দায়ের প্রক্রিয়ায় আইনি সহায়তা প্রদান করেছি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষে আরও বলা হয়, গত ১৮ জুলাই 'কমপিস্নট শাটডাউন' কর্মসূচি চলাবস্থায় যাত্রাবাড়ী থানাধীন কুতুবখালী কাজলা পেট্রোল পাম্পের পাশের পকেটগেটে ফ্যাসিবাদের
দোসরদের গুলিতে হত্যাকান্ডের শিকার দনিয়া কলেজের বিএ (পাস) কোর্সের ছাত্র শহীদ সাকিব হাসান। নিহত সাকিব হাসানের বাবা মো. মর্তুজা আলম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ছাড়াও আসামি করা হয়েছে, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুলস্নাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাবেক প্রধান মো. হারুন-অর-রশিদ, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপস্নব কুমার সাহা এবং যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানকে।
আর গত ৪ আগস্ট লক্ষ্ণীপুর শহরের উত্তর তেমুহনি এলাকায় গুলিতে হত্যাকান্ডের শিকার হন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র শহীদ ওসমান পাটওয়ারী ওরফে ওসমান গণি। নিহতের বাবা মো. আব্দুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলাটিতে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন নিখিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
এই দুই হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় নাগরিক কমিটির তত্ত্বাবধানে ট্রাইবু্যনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল আইন, ১৯৭৩ এর ৩(২) (এ), ৩(২) (গ), ৩(২) (এইচ), ৪(১) এবং ৪(২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
শাহীন কলেজের শিক্ষার্থী
আহনাফের মায়ের অভিযোগ
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফকে হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর আহনাফের মা জারতাজ পারভীন সাফাক এ অভিযোগ দায়ের করেন।
এ সময় তার খালা উপস্থিত ছিলেন। আবেদনে আহনাফের মা অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন।
পরে আহনাফের মা বলেন, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই তো সব কিছু হয়েছে। আমরা তো আর ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এখন তদন্ত কর্মকর্তারা খুঁজে বের করবে কারা কারা হত্যার সঙ্গে জড়িত।'
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, 'অভিযোগে সুনির্দিষ্টভাবে কারো নাম বলেননি। তৎকালীন সরকার, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ, পুলিশ বাহিনী এটা করেছে। ওনারা বলেছেন, আমরা ঘটনাস্থলে যেহেতু ছিলাম না, তাই সরকারের যারা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তদন্ত করে করে যেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'বিএএফ শাহীন কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা যোগাযোগ করেছেন। তাদের বলব, তারা যেন আন্দোলনে আহত, নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে তথ্য দেন। আমরা তাদের নাম-ঠিকানা গোপন রাখব।'