শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ কল্যাণের কাছ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দাবি করা ৬৬৬ কোটি টাকা দিতে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই রায় স্বঃপ্রণোদিতভাবে একজন বিচারপতি-কেন্দ্রিক যুক্তিতে প্রত্যাহার (রিকল) করে নিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রধান বিচারপতির কাছে এই মামলার নথি পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও
বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়টি প্রত্যাহার করে নেন।
পরে ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুলস্নাহ-আল-মামুন সাংবাদিকদের বলেন, 'রায় প্রদানকারী বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি রায় রিকল করার (গ্রাউন্ডে) যুক্তিতে বলেছেন যে, বেঞ্চের অপর বিচারপতি এই কোর্টেই রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। সরকার পক্ষে এই মামলাটি তিনি একসময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সুতরাং, তিনি (বিচারপতি) যেহেতু এই মামলা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তাই তিনি বিচারক থেকে রায়টি দিলে ডিফেক্টিভ হবে। তাই রায়টি প্রত্যাহার (রিকল) করে তিনি প্রধান বিচারপতির কাছে মামলাটি পাঠান, অন্য কোর্ট নির্ধারণের জন্য।'
তবে বিগত ছয় মাস ধরে এই মামলাটি শুনানি করার সময় বিষয়টি সামনে আনা হলো না কেন জানতে চাইলে আইনজীবী আবদুলস্নাহ-আল-মামুন আরও বলেন, 'এটা আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। জনগণের কাছে একটা ভুল মেসেজ যাবে যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কারণে হয়ত এটা করেছেন।'
এর আগে গত ৪ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ কল্যাণের এনবিআরের ৬৬৬ কোটি টাকা কর দাবির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এতে করে ড. ইউনূসকে ৬৬৬ কোটি টাকা সরকারকে পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছিলেন আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে জারি করা রুল খারিজ করে ৪ আগস্ট বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
প্রসঙ্গত, ড. মুহাম্মদ ইউনূস চেয়ারম্যান থাকা গ্রামীণ কল্যাণের কাছে ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ করবর্ষের প্রদেয় কর দাবি ঘিরে গ্রামীণ কল্যাণ ২০১৭ সালে পৃথক রিট করা হয়। সে রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। সে রুল শুনানি শেষে রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের বিরুদ্ধে এনবিআর পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। গত ১১ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টে মূল বিষয়বস্তুর ওপর শুনানির নির্দেশ দেন। এরপর শুনানি শেষে রুল খারিজ করে গত ৪ আগস্ট রায় দেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে গ্রামীণ কল্যাণের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল, সরদার জিন্নাত আলী ও আবদুলস্নাহ-আল-মামুন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা পলি।