নতুন বই ছাপানোর দরপত্র উন্মুক্ত হচ্ছে ৭ অক্টোবর
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ২ কোটি ১২ লাখ ৫২ হাজার ৬ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৬০৬টি বই তুলে দিয়েছিল সরকার
প্রকাশ | ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দিতে ৭ অক্টোবর থেকে বই ছাপানোর দরপত্র উন্মুক্ত হচ্ছে।
বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বুধবার বলেন, 'টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। রোববারের মধ্যে সবগুলো টেন্ডার হয়ে যাবে। একটা টেন্ডার ৭ তারিখ ওপেন হবে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে ওপেন হবে। তখন ঠিক হবে কারা বইগুলো ছাপানোর কাজ পাবে।'
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়েছিল। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ২ কোটি ১২ লাখ ৫২ হাজার ৬ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৬০৬টি বই তুলে দিয়েছিল সরকার।
এবার কবে নাগাদ ছাপাখানার কাজ শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই উঠতে পারে তা জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক রিয়াদ চৌধুরী বলেন, 'ক্লাস ফোর, ফাইভ, সিক্সের টেন্ডার হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করব আজকে সেভেনেরটা দেওয়ার জন্য। খুব দ্রম্নতই সব দিতে পারব আশা করি। আমরা চেষ্টা করব যাতে সব বই জানুয়ারির আগেই দিয়ে দেওয়া যায়।'
বই ছাপাখানায় যাওয়ার আগে যেসব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয় তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
আগামী শিক্ষাবর্ষের নবম ও দশম শ্রেণির বই ২০১২ সালের পুরনো সিলেবাসে ছাপানো হবে জানিয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এ দুই শ্রেণির নতুন পাঠ্যবইয়ের চাহিদা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাব্যবস্থা আমূল পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। মাধ্যমিকে ফিরছে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ। মূল্যায়ন পদ্ধতি অনেকটাই জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর মতো হবে।
গত ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব রহিমা আক্তার স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে বলা হয়, নানা সমস্যার কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ 'বাস্তবায়নযোগ্য নয়'।
এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বাধা হিসেবে শিক্ষকদের প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়বস্তু ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা ও নেতিবাচক ধারণা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবের কথা বলা হয় সেখানে।
সিদ্ধান্ত হয়েছে, পাঠ্যক্রম সংশোধন ও পরিমার্জন করে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং আগামী বছর থেকে পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আসবে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক রিয়াদ
বলেন, 'প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই নতুন কারিকুলামে হবে। আর চতুর্থ শ্রেণি থেকে বাকিগুলোর বই ২০১২ সালের কারিকুলামে তৈরি করা হবে।'
ক্ষমতার পালাবদলের পর সংস্কারের অংশ হিসেবে আগের পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের কথা বলেছে বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকার।
এরই অংশ হিসেবে এনসিটিবির প্রকাশিত বিনামূল্যের প্রণয়ন করা ও ছাপানো সব পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন ও সমন্বয় করতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে।
পরে দশ সদস্যের এ কমিটির কয়েকজন সদস্য নিয়ে সমালোচনা ও আলোচনার মধ্যে দুই সপ্তাহের মাথায় মন্ত্রণালয় ওই কমিটি বাতিল করে।
রিয়াজুল হাসান বলছেন, 'কমিটি বাতিল হওয়ার কারণে কাজের কোনো ক্ষতি হয়নি। সংশোধন, পরিমার্জনের কাজ চলছে; পাশাপাশি টেন্ডারের কাজ চলছে। টেন্ডার ওপেন হওয়ার পর ১০-১৫ দিনের মধ্যে তাদের কাজ দেওয়া হবে।'
তবে ২০১২ সালের কারিকুলামে বই ছাপানোর সিদ্ধান্ত হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, পুরনো অভ্যস্ততায় ফিরতে তাদের কষ্ট হবে।
মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তারের বাবা গোলাম মর্তুজা বলেন, 'ওরা তো নতুন একটা সিস্টেমে পড়াশোনা করছিল; আবার পরিবর্তন কেন? একটা শুরু করে আবার মুখস্ত পড়াশোনায় যেতে হবে, জানি না তারা কতটা ফিরে যেতে পারবে।'
এদিকে বাংলাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রিন্টারগুলো মাদ্রাসার বিভিন্ন বই ছাপানোর কাজ করছে।
বরাবরই পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ করে আসছে অগ্রণী প্রিন্টারস। এ ছাপাখানার সেলস ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ূম বলেন, 'অনুমোদন পেলে বই ছাপাব আমরা। সব সময়ইতো ছাপাই। আলাপ-আলোচনা এখনো হচ্ছে। কবে কাজ পাওয়া যাবে সেটা জানি না।'
আল কারিফ প্রিন্টার্স এর স্বত্বাধিকারী মুরাদ হোসেন বলেন, 'এখনো আমরা কাজ পাইনি। কথাবার্তা চলছে, কাজ পাব কি পাব না জানি না। আমাদের এখানে কাজ কম। বোর্ড বই আসলে কাজ চলবে আরকি।' সূত্র : বিডিনিউজ