এবার শিবিরের ঢাবি শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ্যে

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এবার পূর্ণাঙ্গ কমিটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ছাত্র সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সেক্রেটারির পরিচয় প্রকাশের তৃতীয় সপ্তাহে বুধবার কমিটির সবার নাম প্রকাশ হয়। সংগঠনটির ফেসবুক পেজে ১৪ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর শাখা শিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম সংবাদকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রম্নপে একটি বার্তা দেন। তিনি বলেন, 'অন্যান্য সংগঠনের মতো করে আমাদের কমিটি হয় না। এজন্য আমাদের কমিটিতে সদস্য সংখ্যা কম মনে হতে পারে। ছাত্রদের নীতি নৈতিকতা, স্কিল ডেভেলপমেন্টসহ সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমাদের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। সেই বিভাগগুলো আমাদের কার্যক্রমগুলো তদারকি করে থাকে।' কমিটি গত জানুয়ারিতে গঠিত হয়েছে জানিয়ে তিনি লিখেন, ''ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন নিপীড়নের কারণে আমরা তা পাবলিকলি প্রকাশ করতে পারিনি। ২৪-এর ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানের মাধ্যমে এবং শহীদদের আত্মত্যাগের ফলে দেশ 'ফ্যাসিবাদের' মুক্ত হয়েছে এবং আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেয়েছি।'' আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের। এমনকি শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের হেনস্তার মুখোমুখিও হতে হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ধীরে ধীরে কাটতে থাকে এই বাধা। ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও যে সেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, ধীরে ধীরে তা প্রকাশিত হচ্ছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনের যে বৈঠক হয় তাতে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি পরিচয়ে যোগ দেন সাদিক কায়েম। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার দা সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তার মাস্টার্স শেষ হয়েছে। সরকার পতন আন্দোলনের ডাক দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কায়েমের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টিও সামনে এসেছে। ৮ আগস্ট অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত জানাতে তিনি বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন, শপথ অনুষ্ঠানেও বঙ্গভবনে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতির পরিচয় প্রকাশের পরদিন প্রকাশ পায় সেক্রেটারি এস এম ফরহাদের পরিচয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের কবি জসীমউদদীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি শাখা কমিটিতে ফরহাদের নাম ছিল। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। তবে ফরহাদ দাবি করেছেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে তার কোনো ধরনের সম্পর্ক ছিল না। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্র সংগঠনটিতে পদ চেয়ে কখনো জীবনবৃত্তান্ত জমা দেননি। কীভাবে শাখা কমিটিতে কীভাবে তার নাম উঠে, তা তার জানা নেই। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ছবির বিষয়ে তার বক্তব্য ছিল এমন : 'হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ও ডিপার্টমেন্ট ডিবেটিং ক্লাবের সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ডিবেটের বিভিন্ন আয়োজনে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আমার উপস্থিত থাকার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে। এগুলোর সবগুলোই ছিল ডিবেট ক্লাব সংশ্লিষ্ট আয়োজন। কোনো রাজনৈতিক আয়োজন নয়।' বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা ফরহাদের পরামর্শে করা হয় বলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের। শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটির কেউ অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন কি না, সেই বিষয়ে কোনো তথ্য এখনো প্রকাশ পায়নি। তারা কারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের মহিউদ্দিন খান, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক পদে হোসাইন আহমাদ জুবায়ের, ছাত্র আন্দোলন ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম, অফিস সম্পাদক ইমরান হোসাইন, বায়তুল মাল সম্পাদক আলাউদ্দিন আবিদ, দাওয়াহ ও ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক হামিদুর রশিদ জামিল। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে আছেন নূরুল ইসলাম নূর, বিজ্ঞান ও ক্রীড়া সম্পাদক মো. ইকবাল হায়দার, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক মো. আনিছ মাহমুদ ছাকিব, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক রিয়াজুল মিয়া, ব্যবসায় শিক্ষা ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হাসান মোহাম্মদ ইয়াসির ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক আব্দুলস্নাহ আল আমিন।