বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১

জাবিতে আপাতত বন্ধ হচ্ছে না ছাত্ররাজনীতি

ওসমান সরদার, জাবি প্রতিনিধি
  ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
জাবিতে আপাতত বন্ধ হচ্ছে না ছাত্ররাজনীতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও (জাবি) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে জাবিতে ছাত্ররাজনীতি আপাতত বন্ধ করার পক্ষে নয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা বলছেন, অংশীজনদের সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য প্রশাসনকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।

গত বুধবার ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কার্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোলস্নাকে গণপিটুনি ও পরবর্তীতে হাসপাতালে মৃতু্যর ঘটনায় পুনরায় ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি জোরদার হয়। শুক্রবার জুমার নামাজের পর সব আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা একযোগে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়। এ সময় ছাত্ররাজনীতি বন্ধে উপাচার্যকে ৪৮ ঘণ্টা

সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা।

তবে সরাসরি ছাত্ররাজনীতি বন্ধ না করে 'নিয়ন্ত্রিত' ছাত্ররাজনীতি চালুর পক্ষে মত প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন দফা সংস্কারের প্রস্তাব রাখা হবে বলে জানা গেছে। প্রশাসনের প্রস্তাবনাগুলো হলো- কোনো ছাত্র সংগঠন কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক হবে না; ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃত্ব স্বনির্বাচিত হতে হবে এবং ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃত্ব স্বশাসিত হতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০১৮ এর ৫(খ) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জাকসু, হল সংসদ, বিভাগীয় সংসদ/সমিতি এবং প্রক্টর/বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপ্রাপ্ত সংগঠন ছাড়া অন্য কোনো সংগঠনের কর্মতৎপরতা থাকবে না। এর প্রেক্ষিতে 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩' ও ছাত্রছাত্রী শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠন করার সাংবিধানিক অধিকারচর্চার সুযোগ আছে বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিপক্ষে মত প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সোহাগী সামিয়া যায়যায়দিনকে বলেন, 'ক্যাম্পাসগুলোতে প্রশাসন দুর্বল কাঠামোতে থাকার কারণে সন্ত্রাসী ধারার রাজনীতি চালু হয়েছে। এ মুহূর্তে ছাত্ররাজনীতি যদি নিষিদ্ধ হয়েও যায়, কিন্তু প্রশাসন যদি শক্তিশালী অবস্থানে আসতে না পারে; তাহলে সন্ত্রাসী রাজনীতি থেমে থাকবে না। বরং এতদিন ধরে জনগণের পক্ষে যারা কথা বলেছে, সেই গঠনমূলক রাজনীতিও বন্ধ হয়ে যাবে। গোটা দেশে যখন রাজনীতি চলবে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী রাজনীতি থেকে দূরে থাকবে- এমনটা হতে পারে না। তাই আমরা ছাত্ররাজনীতি চালু থাকার পক্ষে মতপ্রকাশ করছি।'

তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম যায়যায়দিনকে বলেন, 'গণ-অভু্যত্থানের ৯ দফার ৭ম দফায় আমরা ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছিলাম, আমরা আমাদের সেই অবস্থানে অটল আছি। তবে শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক চর্চা অব্যাহত রাখবে।'

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, 'হঠাৎ করে আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা মব জাস্টিসের মতোই এবং বিরাজনীতিকরণেরই নামান্তর। অংশীজনদের সবার মতামতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য প্রশাসনকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে