হারের চেয়েও বেশি আলোচনা হারের ধরন নিয়ে। বৃষ্টির কারণে দুই দিন একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। প্রথম দিন খেলা হয়েছে টেনেটুনে এক-তৃতীয়াংশ সময়। সবমিলিয়ে আড়াই দিনের খেলায় কানপুরে বাংলাদেশের নাক কাটা গেল এক সেশন আগেই। মাত্র ৯৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভারত ৭ উইকেটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। তাতে আরও পোক্ত হয় ভারতের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পথ।
বাংলাদেশের দেওয়া ৯৫ রানের লক্ষ্য টপকাতে ভারতের কয় ওভার লাগে তাই ছিল দেখার বিষয়। আগের ইনিংসে টি২০ খেলা ভারত এবার অবশ্য ওয়ানডের গতিতে রান তুলেছে। তিন উইকেট হারালেও হেসেখেলেই জিতে গেছে রোহিত শর্মার দল। গ্রিন পার্কে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে সিরিজে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল টিম ইন্ডিয়া।
কানপুর টেস্টের পঞ্চম দিনে মঙ্গলবার বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। বাংলাদেশের দেওয়া ৯৫ রানের লক্ষ্য তারা ৩ উইকেট হারিয়েই পেরিয়ে যায়। এটিই গ্রিন পার্কে সফল সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। এর আগে এই মাঠে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড ছিল ৮২ রানের। ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া লক্ষ্য ১৮.২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়েই পেরিয়ে গিয়েছিল শচীন টেন্ডুলকারের নেতৃত্বাধীন ভারত।
ভারতকে এ দিন জয় এনে দেন যশস্বী জয়সওয়াল। ভারতের এই তরুণ ব্যাটার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন এই ইনিংসেও। হাঁকিয়েছেন অর্ধশতক। ৪৫ বলে ৮ চার ও ১ ছয়ে ৫১ রান করেন তিনি। এছাড়া রোহিত শর্মা ৮ এবং শুভমান গিল ৬ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের শিকারে পরিণত হন। বিরাট কোহলি ৩৭ বলে ৪ চারে ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ছয় মেরে জয় নিশ্চিত করেন রিশভ পান্ত।
বাংলাদেশের পক্ষে মিরাজ ৪৪ রানে ২ উইকেট এবং তাইজুল বাকি উইকেটটি শিকার করেন।
আগের দিন ২ উইকেটে ২৬ রান নিয়ে দিন শেষ করা বাংলাদেশ গতকাল ১৪৬ রান তুলতেই অলআউট হয়ে যায়। সাদমান ইসলাম সর্বোচ্চ ৫০ রান করেন।
কানপুরে পঞ্চম দিনে প্রথম ব্যাটার হিসেবে বিদায় নেন মুমিনুল হক। আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান এই বাঁহাতি রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে সুইপ শট খেলতে গিয়ে স্স্নিপে ধরা পড়েন তিনি। আউট হওয়ার আগে ২ রান করেন সাবেক এই অধিনায়ক।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে অধিনায়ক শান্তকে নিয়ে সাদমান দারুণ জুটি গড়ে তুলেছিলেন। স্বাচ্ছন্দেই খেলছিলেন শান্ত। ৫৫ রানের জুটি গড়েন তারা। কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজা বোলিংয়ে আসতেই রিভার্স সুইপ শট খেলতে যান তিনি। বল ব্যাট মিস করে উইকেটে গিয়ে লাগে। ৩৭ বলে ১৯ রান করে বিদায় নেন শান্ত। শান্তর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে মড়ক লাগে টাইগারদের ইনিংসে। ৯১-৯৪ এই ৩ রান করতেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
শান্তর বিদায়ের পরের ওভারেই সাদমান বিদায় নেন। মাত্রই অর্ধশতক পূর্ণ করা এই ওপেনার আকাশ দীপের অফস্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করে স্স্নিপে ধরা পড়েন। ১০১ বলে ১০ চারে ৫০ রান করেন তিনি। পরের ওভারে লিটন দাস জাদেজার বলে পান্তের হাতে ক্যাচ দেন। দুই ওভার পর জাদেজার বলে তার হাতেই ক্যাচ দেন সম্ভাব্য শেষ টেস্ট ইনিংস খেলতে নামা সাকিব। শেষ ইনিংসে ২ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
এরপর একাই লড়াই করতে থাকেন মুশফিকুর রহিম। দলীয় ১১৮ রানে বুমরাহর বলে পান্তের হাতে ক্যাচ দেন ৯ রান করা মিরাজ। ১৩০ রানে তাইজুলও বিদায় নেন বুমরাহর বলে। ১৩ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। জদেজার বলে মুশফিকের বিরুদ্ধেও এলবিডবিস্নউয়ের আবেদন উঠেছিল। আম্পায়ারও সাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান সে সময় ২৭ রানে ব্যাট করা মুশি।
মুশফিক একাই লড়াই চালিয়ে যান। লাঞ্চের আগের একদম শেষ বলে বুমরাহ তাকে বোল্ড করলে বাংলাদেশের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে।
ভারতের পক্ষে জাসপ্রীত বুমরাহ, রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জদেজা প্রত্যেকেই ৩টি করে উইকেট শিকার করেন। বাকি উইকেটটি আকাশ দীপ পান।