জাহাজে বিস্ফোরণ অধিক তাপের কারণে, ধারণা ফায়ার সার্ভিসের ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
চট্টগ্রামে অয়েল ট্যাংকারে আগুন, তিনজন নিহত
প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রাম বু্যরো
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন 'বাংলার জ্যোতি' নামে একটি অয়েল ট্যাংকারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনজনের মৃতু্য হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।
সোমবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ডলফিন জেটি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নেভি ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা দুপুর দেড়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন।
নিহতরা হলেন ডেক ক্যাডেট সৌরভ কুমার সাহা, বিএসসির ফোরম্যান নুরুল ইসলাম ও শ্রমিক।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, আগুনের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের পাঁচটি ও নৌবাহিনীর একটি টাগবোট ঘটনাস্থলে যায়। আশপাশে থাকা জাহাজগুলো নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।
জানা যায়, আগুন লাগা জাহাজ 'বাংলার জ্যোতি' বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন। এটি একটি অয়েল ট্যাংকার জাহাজ। পতেঙ্গা ইস্টার্ন রিফাইনারির সামনে ডলফিন জেটিতে নোঙর করা ছিল। জাহাজটি সাগরে নোঙর করে রাখা বড় ট্যাংকার থেকে তেল পরিবহণ করে জেটিতে নিয়ে আসে। এরপর ইস্টার্ন রিফাইনারিতে তেল সরবরাহ করে। ওই ট্যাংকারে ঘটনার সময় ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের প্রায় ১২ হাজার টন অপরিশোধিত তেল ছিল। ওই ট্যাংকার থেকে এক ঘণ্টা তেল খালাস করা হয়েছিল।
কেইপিজেড ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. মামুন বলেন, 'অধিক তাপের কারণে আজকে (সোমবার) সকালে বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে ক্রুড অয়েলের একটি জাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক টিম অগ্নিনির্বাপণে কাজ করে। আগুন নির্বাপণের পর আমরা উদ্ধার কাজ পরিচালনা করি। এতে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। জাহাজে আর কেউ ছিল না বলে আমরা জেনেছি।'
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে ফায়ার আউটব্রম্নক এমভি বাংলার জ্যোতিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। চবকের টাগবোট কান্ডারি ২, ৩, ৪, ৮, ১০ ও বিএন শিবশা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুনে জাহাজটির সামনের সবগুলো দড়ি পুড়ে গেছে এবং জাহাজটি জেটি থেকে আলাদা করা হয়েছে। জাহাজটি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন। আগুন লাগার কারণ তদন্তসাপেক্ষে জানা যাবে।'
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরীফ হাসনাত বলেন, 'অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সৌরভ কুমার সাহা নামে একজন ডেক ক্যাডেট মৃতু্যবরণ করেছেন। তার বাড়ি ঝিনাইদহ। এছাড়া হতাহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।'
কমিটিতে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরিফ হাসনাতকে আহ্বায়ক ও সংস্থাটির উপমহাব্যবস্থাপক (পস্ন্যানিং ও শিপিং) মো. মোস্তাফিজার রহমানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্যরা হলেন বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (কার্গো সুপারভিশন অ্যান্ড অপারেশন) ক্যাপ্টেন জামাল হোসেন তালুকদার, বিপিসির উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মো. জাহিদ হোসাইন, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন), পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আসিফ মালিক ও যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন)। তাদের সোমবারের (৩০ সেপ্টেম্বর) মধ্যেই অগ্নিদুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে বিপিসির চেয়ারম্যানকে জমা দিতে বলা হয়েছে।
উলেস্নখ্য, বাংলার জ্যোতি তেলবাহী জাহাজটি মূলত বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ার বড় জাহাজ থেকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর সংলগ্ন ইস্টার্ন রিফাইনারিতে তেল নিয়ে আসে। এ বাণিজ্য জাহাজে ২৫-৩০ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। জাহাজটি ১৯৮৭ সালে ডেনমার্কে তৈরি করা হয়।