নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করলেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ কার্যালয়ে পদত্যাগপত্রে সাক্ষর করেন তিনি। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পক্ষাবলম্বন ও দুর্নীতির অভিযোগে তার পদত্যাগ দাবিতে এদিন সকাল থেকে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শেবাচিম কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ৩ আগস্ট পরিচালক সাইফুল ইসলামসহ তার অনুসারীরা স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। তখন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দমাতে নানান অপকর্ম করেছেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি নানান দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত। হাসপাতালের সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, টাকা লুটপাট করা, সৎ, যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানানভাবে হয়রানি করেছেন তিনি। তাই হাসপাতালের উন্নয়নে তার পদত্যাগ সময়ের দাবি হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, এই পদে অতীতে সাধারণত দুই বছর করে দায়িত্ব পালন করেছিলেন শেবাচিমের সাবেক পরিচালকরা। কিন্তু বর্তমান পরিচালক সাইফুল ইসলাম সরকারের তোষামোদির মাধ্যমে একই পদে থেকে তিন বছর ধরে অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সচিবদের সঙ্গে তার সখ্যতা থাকায় পরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমনকি স্বৈরাচার সরকার পতনের পর পরিচালক সাইফুল ইসলাম বিভিন্নভাবে আঁতাত করে ও বিতর্কিত অনেক নেতাকে উপঢৌকন দিয়ে এতদিন তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে এক শিশুর মৃতু্যকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক লাঞ্ছিতের ঘটনায় কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তিনি। আমরা মনে করি, এই পক্ষপাতমূলক আচরণ নিয়ে তার এখানে দায়িত্ব পালন করার দরকার নেই। তাই শেবাচিম হাসপাতালের উন্নয়নের স্বার্থে অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করে রোববার সকাল থেকে অন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনসহ বিভাগীয় কমিশনার ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে পরিচালক তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। পরে তিনি সবার সামনে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন।
ডা. এইসএম সাইফুল ইসলাম জানান, 'আমি বরিশালের সন্তান। বরিশালের প্রতি, এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার আবেগ আছে, ভালোবাসা আছে। তবে এখন থেকে পরিচালকের পদে আমি আর থাকব না। তাই স্বইচ্ছায় পদত্যাগ করলাম।'