সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আরেকটি করে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশের আবেদনের ওপর শুনানি করে রোববার তা মঞ্জুর করেন ঢাকার মহানগর মাহবুবুল হক। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় সালমান ও আনিসুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন নিউমার্কেট থানার এসআই মোরাদ খান।
শুনানিতে আসামিদের পক্ষে মোরশেদ হোসেন শাহীন, ফারজানা ইয়াসমিন রাখিসহ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। বিচারক গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেওয়ার পর আসামিদের জামিন আবেদন করেননি তাদের আইনজীবীরা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল চলাকালে কিছু আসামির নির্দেশে নিরপরাধ মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই আহত হন মাহফুজুর রহমান, নাসির উদ্দিন, শামীম উসমানসহ অনেকে।
ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে মিরপুর-১ সনি সিনেমা হলের সামনে বিসমিলস্নাহ ফ্যাশন ওয়্যারের কর্মী মামুন হত্যা মামলায় আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মিরপুর মডেল থানার এসআই আব্দুর রহমান।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট দুপুরে সনি সিনেমা হলের সামনে গুলিতে নিহত হন মামুন।
এর আগে সালমান, আনিসুল ও নূরকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন মামলায় কয়েক দফা রিমান্ডে দিয়েছিল পুলিশ।
ফের রিমান্ডে মামুন, মানিক ও জ্যোতি
এদিকে, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুলস্নাহ আল মামুন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতিকে আরও এক দফা রিমান্ডে দিয়েছে পুলিশ।
রোববার শুনানি শেষে মামুনের ৪ দিন এবং মানিকের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম মাহবুবুল হক। আর কামালপুত্র জ্যোতির ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারিক হাকিম শেখ মুজাহিদুল ইসলাম।
রাজধানীর নিউমার্কেট থানা এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় মামুন ও মানিককে এদিন আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এ আবেদনের বিরোধিতা করে জামিন আবেদন করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন ও ফারজানা ইয়াসমিন রাখি।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ দেন অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুল হক।
গত ১৯ জুলাই নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়।
নিহতের ভাগ্নি জামাই আব্দুর রহমানের করা এ মামলায় বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল চলাকালে কিছু আসামির নির্দেশে নিরপরাধ মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই আহত হন মাহফুজুর রহমান, নাসির উদ্দিন, শামীম উসমানসহ অনেকে।
ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে ঢাকার আশুলিয়া থানার বাইপাইল এলাকায় মেকানিক্যাল হেলপার আশরাফুল ইসলাম হত্যা মামলায় জ্যোতিকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন আশুলিয়া থানার এসআই মজিবুর রহমান। রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী আল আমিন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শেখ মুজাহিদুল ইসলাম।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট বিকালে বাইপাইল এলাকায় দুই থেকে তিন হাজার শিক্ষার্থী আন্দোলন করছিলেন। তখন আসামিদের নির্দেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা আক্রমণ শুরু করে। সেই সময় ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন আশরাফুল ইসলাম। একপর্যায়ে আসামিদের আক্রমণের শিকার হয়ে মারা যান আশরাফুল।