বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যথেষ্ট। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত দ্রম্নত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া।
রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, 'এই সরকারের প্রথম থেকে চেষ্টা করা উচিত ছিল একটি ভালো নির্বাচন কমিশন বসাবার জন্য। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো কথাবার্তা নাই। তারা কোনো রোডম্যাপ দেয় না। কবে নির্বাচন দেবে তাও বলে না। তারা কি সংস্কার করছে? ছয়টি বিষয়ে সংস্কারের কথা বলেছে, অন্যান্য সংস্কারের ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ আছে। আমরা বলতে চাই, এক মাস যথেষ্ট সময়। এখানে (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) যারা আছে তারা দেশের কৃতী সন্তান, তাদের মেধা আছে তারা বলুক।'
সাবেক মন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন বলেন, 'এর কারণ কি? একটা হলো হাসিনার প্রেত্মতারা এই সরকারের ওপর ভর করে আছে। পুরোপুলিশ বাহিনী, অন্যান্য বাহিনী সব তো হাসিনার লোকেরা এখানে আছে। তারা এখনো বহাল তবিয়তে আছে।'
তিনি বলেন, 'এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আমরা তাদের সাফল্য চাই, সঠিক উপদেশ-পরামর্শ আমরা দিতে চাই। এদেশের ব্রাইট সন্তান হলো এই মুক্তিযোদ্ধারা। এই সরকারের উচিত ছিল প্রথমেই এই মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বৈঠক করা।'
হাফিজ বলেন, 'এই বিপস্নব সেইদিনই সম্পন্ন হবে যেদিন ১৭ বছর লুটতরাজ যারা করেছে, দেশের ব্যাংকসমূহকে যারা ফোকলা করে দিয়েছে, যারা মানুষ হত্যা করেছে, যারা গুম-খুন করেছে তাদের শাস্তির বিধান যেদিন করা হবে সেদিনেই এই বিপস্নব সাফল্যমন্ডিত হবে। আমরা এই বিপস্নবের সাফল্য দেখতে চাই। আমাদের প্রধান করণীয় হলো আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করবো বাংলাদেশে যারা একাত্তরের চেতনাকে বাস্তবায়িত করবে, আগস্ট বিপস্নবের সাফল্যকেও যারা জনগণের দোরগোড়ায়ে নিয়ে আসবে সেটাই হোক আমাদের আজকের দিনের অঙ্গীকার।'
নির্বাচিত সংসদই সংবিধান সংশোধনের অধিকার রাখে মন্তব্য করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'এদেশে সংবিধান সংশোধন করার অধিকার একমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এই কথাটি ভুলে ?যাবেন না। যতই পিএইচডি ডিগ্রি থাকুক এটা নিয়ে আপনারা সংবিধান সংশোধন করতে পারবেন না। আপনারা সুপারিশমালা দিতে পারেন, আপনাদের প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দেখতে পারেন রাজনৈতিক দলগুলো যদি গ্রহণযোগ্য মনে করে সেটি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট তারা নিয়ে নেবেন। কিন্তু নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অন্যভাবে সংবিধান সংশোধন করা যায় না।'
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর, এবি পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মনীষ দেওয়ান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
'চক্রান্ত সফল হবে না'
এদিকে, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশ অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত সফল হবে না মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, দুর্গাপূজায় বিএনপি নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবে।
তিনি বলেন, এখানে কিছু ঘটনাও আছে। আবার কিছু গুজবও আছে। ৫ আগস্টের পরাজিত শক্তিরা বসে নাই। তারা একটা নাশকতা করার চেষ্টা করবে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন এলাকায় পাহারা দেব। সেখানে বিএনপির কেউ ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাতির কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা আমরা অত্যন্ত কঠিন হাতে মোকাবিলা করবো।
রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে 'জিয়া মঞ্চের ৩১' এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু উপস্থিত ছিলেন।
'প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না'
এদিকে, বাংলাদেশ সিকিম বা ভুটান নয় যে অন্য কোনো দেশের প্রেসক্রিপশনে চলবে। বাংলাদেশ অন্য কোনো দেশের প্রেসক্রিপশনে চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার রাজশাহীর ভুবনমোহন পার্কে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন। ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থান আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে রাজশাহী মহানগর এবং জেলার শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন রিজভী। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে 'আমরা বিএনপি পরিবার' প্রতিনিধি দল।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ সিকিম বা ভুটান নয়। অন্য কোনো দেশের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না। তাই কেউ বাইরে থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল কিছু করতে চাইলে আখেরে তার ফলাফল ভালো হবে না। কোনো তাবেদার দিলিস্নর গোলামকে বাংলাদেশের জনগণের ওপর আর রাজত্ব করতে দেওয়া হবে না।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মামুন-অর-রশীদের সঞ্চালনায় সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিলস্নাত, আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদাসহ দলটির কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী জেলা, মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎ গ্রহণ শেষে ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থানে রাজশাহীর নিহত তিনজনের পরিবারের হাতে দলটির পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়।