বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে, তারা ব্যর্থ হলে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ব্যর্থ হবে। দেশে সংস্কার সুষ্ঠু না হলে নির্বাচন করে লাভ নেই। সংস্কারের সঠিক রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। তার হাত ধরেই নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি হবে।
শনিবার বিকাল ৫টায় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত দুই শহীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও জামায়াতে ইসলামী পাবনা শাখার আয়োজিত সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পাবনা জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা আবু তালেব মন্ডলের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইকবাল হুসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা জেলার সাবেক আমির অধ্যাপক আব্দুর রহিম, নায়েবে আমির মাওলানা জহুরুল ইসলাম প্রমূখ।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, আগস্টের বিজয় নিয়ে দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এক্সট্রা ক্রেডিট নিতে চান, কিন্তু তারা তা চান না, এ বিজয় ছাত্র-জনতা সবার। ১৫টি বছর জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীদের উপর হাসিনা সরকার যে নির্যাতন করেছে। তা অন্য কারও উপর হয় নাই। নিজেদের ভাতের টেবিলও তাদের নিরাপদ ছিল না। তাদের ১১ জন জাতীয় নেতাকে বিচারিক হত্যাকান্ডের মাধ্যমে মিথ্যা অভিযোগ ও সাজানো রায়ের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার সমস্ত বিরোধী দলকে দমন করেছে এবং হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম ও খুন করেছে। আগস্টে ছাত্র জনতার যুদ্ধের বিনিময়ে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। অনেকে আবার স্বাধীন হয়েছে বলেন। আসলে পরাধীনতার প্রশ্ন থাকলেই তো স্বাধীনতার কথা আসে। এতদিন দেশে আইন ছিল অসমান কিন্তু এখন দেশে আইন সমান। বিপস্নবের পরে যেন নিগৃহ না আসে। তাই সবাই যেন আইনের কাছে সমান অধিকার পান। দেশ যেন একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়- সেজন্য সবার কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি ও তাদের লোকজন পাপের বোঝা সইতে পারবে না বলেই শহর ছেড়ে পালিয়েছে।
শিক্ষা কমিশন নিয়ে কথা বলতেই তিনি বলেন, এই কমিশনে আস্তিকদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। যারা জাতীয় চেতনা ধারণ করেন তাদের দায়িত্ব দিতে হবে। বর্তমানে দেশ শান্ত থাকলেও এটা অনেকের সহ্য হচ্ছে না, অশান্ত করার পায়তারা করছে। এ ব্যাপারে সবার সব সময় সজাগ থাকতে হবে। ছাত্র জনতার বিজয় যেন হাতছাড়া না হয়।
\হনেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তারা কখনই আইন হাতে তুলে নেবেন না। যা করব আইনের সহায়তায়ই করব। এর আগে সকালে তিনি জামায়াতে ইসলামী পাবনা জেলা শাখার রুকন সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
ঐক্যই হোক এ জাতির সৌন্দর্য
স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা জানান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করি। কোনো বিভক্তি নয়, ঐক্যই হোক এ জাতির সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধি। ঐক্যমতের ভিত্তিতে দেশবাসী মিলে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা যদি ভালো কিছু করে দেশবাসী উপকৃত হবে, আমি উপকৃত হবো, আপনি উপকৃত
হবেন। কিন্তু তারা যদি কোনো ভুল করে, আমরা তাদেরকে ধরিয়ে দেব সংশোধন করে দেব। কিছু বিষয় আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে, আমরা পরামর্শ দিয়েছি, ইতিবাচক ফল পেয়েছি। মানুষ হিসেবে তাদের জন্য দোয়া করা উচিত। তারা যেন জাতির প্রত্যাশা এবং বিবেকের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ না করেন।
শনিবার সকালে স্থানীয় একটি হোটেলে চুয়াডাঙ্গায় জামায়াতের দায়িত্বশীল সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জামায়াতের চুয়াডাঙ্গা জেলা আমির রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, 'ভারত যেমন একটি দেশ বাংলাদেশও একটি দেশ। ভারত ছাড়াও আমাদের প্রতিবেশী আছে। বিশ্বসভায় আরও অনেকগুলো দেশ আছে। সবার প্রতি আমাদের একই কথা বিশ্বাস সমস্ত সদস্যরা আমরা মিলেমিশে পারস্পরিক মর্যাদা ও সমতার ভিত্তিতে সামনে এগিয়ে নেব।'
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত-আহত প্রতিটি ব্যক্তি ও পরিবারের পাশে দাঁড়াতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন জামায়াতের আমির।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের সঞ্চালনায় দায়িত্বশীল সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, মেহেরপুর জেলা আমির মওলানা তাজউদ্দিন।
হাফেজ আব্দুল খালেকের কোরআন থেকে তেলওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা আমির অধ্যাপক আবুল হাশেম, চুয়াডাঙ্গা জেলা নায়েবে আমির মওলানা আজিজুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল, আব্দুল কাদের, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আনোয়ারুল হক মালিক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার জামায়াতের দায়িত্বশীল সদস্যরা অংশ নেয়।