কোরআন সুন্নাহবিরোধী আইনের প্রশ্নে কোনো আপস চলবে না মামুনুল হক
প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ময়মনসিংহ বু্যরো ও জামালপুর প্রতিনিধি
কোরআন সুন্নাহবিরোধী আইনের প্রশ্নে কোনো আপস চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেছেন, আমরা বলিষ্ঠ ভাষায় বলতে চাই, শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছি নতুন কোনো ইসলাম বিদ্বেষী শক্তিকে বাংলার মসনদে দেখার জন্য নয়। ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন পর্যন্ত আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। আগামী দিনেও সহযোগিতা দেওয়ার ইচ্ছা, আগ্রহ আছে। কিন্তু সেই ইচ্ছাটা সরকারেরও থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ নগরের টাউন হল এলাকার কেন্দ্রীয় আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে ছাত্র-জনতার বিপস্নবে সংঘটিত গণহত্যার বিচার ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, 'ট্রান্স জেন্ডারের নামে সমকামিতা, বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার মতো ইসলামবিরোধী কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হলে আমরা কারবালা তৈরি করব। শিক্ষা কমিশনে ইসলামী শিক্ষাবিদ আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যে কমিশন আপনারা গঠন করেছেন, সেটিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। শিক্ষাব্যবস্থা এবং কোরআন
সুন্নাহবিরোধী কোনো আইনের প্রশ্নে আপস চলবে না। প্রয়োজন হলে আমরা আবার শাপলা চত্বরে যাব। ইসলামবিরোধী এজেন্ডা আমরা রুখে দিব।'
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ময়মনসিংহ
জেলা শাখার সভাপতি মুফতি হাবীবুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমেদ, মাওলানা আতাউলস্নাহ আমীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসানাত জালালীসহ বাইতুল মাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হেদায়াতুলস্নাহ হাদী, মুহাম্মদ আবদুল মুমিন, ঢাকা দক্ষিণের সহ-সভাপতি মুহাম্মাদুলস্নাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ওয়াসেক বিলস্নাহ নোমান প্রমুখ।
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আলস্নামা মামুনুল হক বলেছেন, বিগত সরকার সেসব আইন পাষ করেছে, এর কোথায় কোথায় কোরআন বিরোধী ধারা রয়েছে, সেগুলো সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। নতুন করে যদি ইসলামবিরোধী, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো ধারা আইনে যুক্ত করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে শাপলা চত্বরে নতুন কারবালা হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের সিংহজানী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
মামুনুল হক বলেন, 'সরকারকে বলতে চাই, শিক্ষা কমিশন নামে যে কমিশন গঠন করা হয়েছে, এর মধ্যে সমকামিতার প্রোমোটকারী যারা রয়েছে, তাদের শিক্ষা কমিশন থেকে বাদ দিন। ইসলামী শিক্ষাবিদ, আলেম, ওলামাদের প্রতিনিধি সেখানে অন্তর্ভুক্ত করুন। এটা আমাদের অনুরোধ নয়, আমাদের অধিকারের কথা। আজ জেলা শহরের মঞ্চ থেকে বলছি, কয়েকদিন পর ঢাকা থেকে বলব। এরপর শাপলা চত্বরে যাব, এরপরও যদি আমাদের কথায় কর্ণপাত না করা হয়, তাহলে গণভবন-বঙ্গভবন কোনো কিছুই ছাড়ব না।
তিনি আরও বলেন, 'বন্ধুত্বের জন্য আমরা অনেকের দিকে হাত বাড়াতে পারি, কিন্তু কেউ যদি প্রভুত্বের দৃষ্টি দেয়, আমরা সে চোখ উপড়ে ফেলতে প্রস্তুত আছি। বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য। বাংলাদেশের উন্নয়নকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য, বাংলাদেশকে নিজেদের দেশের করতলগত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের দাদা-বাবুরা এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার, সার্বভৌমত্বের অধিকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল।'
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, 'নরেন্দ্র মোদিরা তিন তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। তাদের একতরফা প্রশ্রয়ের সুযোগ নিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। তারা একটিবারের জন্য চিন্তা করেনি, এ দেশের মানুষের অভিপ্রায় কি, চাওয়া কি, এ দেশের মানুষ তাদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ পায়নি। শুধু ভারতের স্বার্থকে রক্ষা করার জন্য এ দেশের মানুষের অধিকারকে, চাওয়া-পাওয়াকে, ভোটের অধিকারকে তারা তাদের দুই পায়ে পিষ্ট করেছে। তারা বাংলাদেশে স্বাধীন প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায়নি, তারা একজন মুখ্যমন্ত্রী বসাতে চেয়েছিল।'
ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচারের দাবি এবং নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জামালপুর জেলা শাখা এই গণ-সমাবেশের আয়োজন করে।
খেলাফত মজলিস জামালপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আলী খানের সভাপতিত্বে খেলাফত মজলিসের নেতা ও আলেম-ওলামারা বক্তব্য রাখেন।