আশ্বিনের স্বস্তির বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে নগরবাসী
প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ নগরবাসী এক পশলা বৃষ্টির জন্য গত ক'দিন ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে। তবে শরতের নীল আকাশে মাঝেমধ্যে টুকরো কালো মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ালেও তাতে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। বরং তীব্র গরম আর গুমোট হাওয়া কর্মচঞ্চল নগরজীবন অতিষ্ঠ করে তোলে। এরই মধ্যে বুধবার সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হলে সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। যদিও তা দীর্ঘায়িত হওয়ায় ব্যস্ত নগরীর কর্মজীবী মানুষ নানা ভোগান্তির মধ্যে পড়ে।
বিশেষ করে সকালের পিকআওয়ারে যারা কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই অফিস-আদালত ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কর্মস্থলের উদ্দেশে ঘরের বাইরে বের হয়েছিলেন তাদের পথঘাটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঝুম বৃষ্টিতে গণপরিবহণের সংখ্যা কম থাকায় এবং রিকশা-অটোরিকশা গলাকাটা ভাড়া দাবি করায় স্বল্প আয়ের অনেক মানুষকে বৃষ্টিতে ভিজেই পৌঁছাতে হয়েছে নিজ নিজ গন্তব্যে। এর ওপর অলিগলিসহ বিভিন্ন প্রধান সড়কে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় জনদুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ সময় ভারী বৃষ্টি ঝরতে থাকায় কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা অনেকেই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি।
এদিকে সকালের ভারী বর্ষণ থেমে যাওয়ার পরও দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় গোটা নগরীর কর্মচঞ্চল্যে এক ধরনের স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে দোকানপাট ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা দেখা দেয়। বৃষ্টির কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন ফুটপাতের হকাররা।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে সারাদেশে বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কয়েক দিনের টানা গরমের পর এই বৃষ্টি আরও এক থেকে দুই দিন স্থায়ী হবে। এর মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সতর্কতা দিয়েছে অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে সমুদ্রবন্দর এলাকায় দেখানো হয়েছে ৩ নম্বর এবং নদীবন্দরে ১ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, দেশে মৌসুমি বায়ু এখন সক্রিয় আছে। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হয়েছে, যার ফলে সারাদেশেই কম-বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই বৃষ্টি আজ বৃহস্পতিবারও অব্যাহত থাকবে। কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণেরও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
বুধবার সকালে মগবাজার মোড়ে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আজিজ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'অনেক গরম পড়েছিল। রাতেই বৃষ্টি হবে বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু সকালবেলা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সেভাবে আকাশে মেঘ দেখিনি। তাই ছাতা নিয়ে বের হইনি। তবে বের হওয়ার পর বৃষ্টি হওয়ায় অনেকটা ভিজে গেছি। রাস্তায় গণপরিবহণের সংখ্যা খুবই কম। তাই রিকশায় অফিসে যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু তারা গলাকাটা ভাড়া চাচ্ছে। তাই বাসের জন্য অপেক্ষা করছি।' নির্ধারিত সময় অফিসে পৌঁছাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, বৃষ্টি হওয়াতে ভালো লাগছে। আবহাওয়া শীতল হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি হলেই যানজট বেড়ে যায়, লোকাল বাসে জায়গা পাওয়া যায় না, রিকশা পাই না। এটাই শুধু কষ্ট।
মালিবাগ মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক বেলাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৯টা থেকে যে বৃষ্টি শুরু হইছে, থামার লক্ষণ নাই। বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। এ অবস্থায় বেশিক্ষণ রিকশা চালালে নিশ্চিত জ্বরে পড়তে হবে। তাই আর কিছু সময় রিকশা চালিয়ে বাসায় ফিরে যাব।
বেলাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'বৃষ্টিতে ৫-১০ টাকা বেশি ভাড়া চাইলে প্যাসেঞ্জার ক্ষেপে ওঠেন। অনেকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তারা আমাদের কষ্ট বুঝতে চান না।'
বাসচালক কাশেম মিয়া জানান, সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতার দেখা দিয়েছে। এতে করে সাধারণ পরিবহণ কম বের হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে যানজটও দেখা গেছে।
তবে প্রাইভেটকার চালক সেলিমের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে তৎপর নয়। তারা দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করছে। এর উপর বৃষ্টি হওয়ায় তারা যেন উধাও হয়ে গেছে। এ সুযোগে গণপরিবহণ চালকরা যে যার খেয়াল-খুশি মতো গাড়ি চালাচ্ছে। এতে কিছু সড়কে যানজট ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে।
যদিও দুপুরের পর রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বড় ধরনের কোনো যানজট চোখে পড়েনি। এ ছাড়া জলাবদ্ধ সড়কের সংখ্যাও ছিল খুবই কম। বিশেষ করে প্রধান সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা ছিল না বললেই চলে।
যদিও সকালের দিকে ঝুম বৃষ্টি হওয়ার পর কাকরাইল, মোহাম্মদপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়াসহ মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা এবং মিরপুরের মাজার রোড, এলিফ্যান্ট রোড, মৎস্য ভবন, সেন্ট্রাল রোড, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, তেজকুনি পাড়া, দক্ষিণ মনিপুরের মোলস্নাপাড়া, মহাখালীর বিভিন্ন রাস্তায় বেশখানিকটা পানি জমে।
এ ছাড়া শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, নয়া পল্টন, পুরানা পল্টন, আরামবাগ, শাহজাহানপুর, ফকিরেরপুল, বিজয়নগর সড়ক বেশকিছু সময় পানিতে ডুবে ছিল। দয়াগঞ্জ মোড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, কমলাপুরের কাছে টয়েনবি সার্কুলার রোড, যাত্রাবাড়ী, কাজলা, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, গোলাপবাগের নিচু এলাকাসহ আরও কয়েকটি এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় বলে জানান সেখানকার বাসিন্দারা।