কুমিলস্নায় ৮ যাত্রী হত্যা

পেট্রোল বোমা নয়, পোড়ানো হয় গান পাউডার ছিটিয়ে

সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর তথ্য ও ভিডিও প্রকাশ

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর এলাকায় ২০১৫ সালে একটি নৈশকোচের ৮ যাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার সাড়ে ৯ বছর পর এ হত্যাকান্ডের নেপথ্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য ও টকশোর ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। এতে এ নাশকতার ঘটনার পরিকল্পনা করা হয় সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামালের ঢাকার গুলশানের বাসায়। এ পরিকল্পনার বৈঠকে লোটাস কামাল ছাড়াও ছিলেন সাবেক রেলমন্ত্রী ও চৌদ্দগ্রাম আসনের এমপি মুজিবুল হকও। পরে তারা দুজন গণভবনে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তা উপস্থাপন করলে বাস্তবায়নে সহযোগিতার দায়িত্ব দেওয়া হয়র্ যাব-পুলিশকে। মঙ্গলবার দুপুরে কুমিলস্না জজকোর্টের আইনজীবী সমিতি ভবনের হলরুমে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন করে কথোপকথনের এসব তথ্য ও টকশোর ভিডিও তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সদর দক্ষিণ আসনের সাবেক এমপি মো. মনিরুল হক চৌধুরী। মনিরুল হক চৌধুরী আরও বলেন, 'বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনকে দমানোর পরিকল্পনা হিসেবে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রম্নয়ারি ভোররাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকা অভিমুখী আইকন পরিবহণের একটি যাত্রীবাহী বাস চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর এলাকায় পৌঁছলে এতে গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন দেওয়া হয়। এতে বাবা-মেয়েসহ বাসের ৮ ঘুমন্ত যাত্রী আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে চৌদ্দগ্রাম থানায় পৃথক ২টি মামলা করে। মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরও আসামি করা হয়।' এদিকে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১১ সেপ্টেম্বর ওই বাসের মালিক মো. আবুল খায়ের বাদী হয়ে কুমিলস্নার আদালতে সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক, পুলিশের সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক,র্ যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, কুমিলস্নার তৎকালীন পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীসহ ১৩০ জনের নাম উলেস্নখ করে অজ্ঞাত আরও ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ মামলা দায়েরের দুই সপ্তাহ পর গতকাল ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ২০১৫ সালে পুলিশের দায়ের করা দুই মামলার এজাহার ও পরে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণে তার নাম না থাকলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও হয়রানির উদ্দেশ্যে পরে সম্পূরক চার্জশিটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একটি টকশোর ভিডিও তথ্যের বরাত দিয়ে মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, 'ওই সময় আন্দোলন দমাতে ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের ফাঁসানোর জন্য লোটাস কামাল ও মুজিবুল হকের পরিকল্পনামাফিক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের্ যাব-পুলিশের সহায়তায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন, শাহজালাল মজুমদার, হেলাল, কুমিলস্না দক্ষিণ জেলা যুবলীগ নেতা রুপম মজুমদার, চঞ্চল, সজল, আলম, রিপনসহ তাদের লোকজন বাসটিতে গান পাউডার দিয়ে নাশকতার এ ঘটনাটি বাস্তবায়ন করে। এ ছাড়া পেট্রোল বোমা মেরে বাসটি পোড়ানোর ঘটনা ওইসময় পুলিশ মামলায় উলেস্নখ করলেও প্রকৃতপক্ষে আশিকুর রহমান বাপ্পী নামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বরিশালের সাবেক এমপি পংকজ দেবনাথের কাছ থেকে সংগ্রহ করা গান পাউডার দিয়ে বাসটি পোড়ানোর তথ্য এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।' মনিরুল হক চৌধুরী জানান, তিনি এসব তথ্য মামলার পরবর্তী তারিখে আদালতে জমা দেবেন এবং আদালত তা আমলে নিয়ে প্রকৃত নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। এসময় বক্তব্য রাখেন মনিরুল হক চৌধুরীর আইনজীবী কাজী নাজমুস সা'দাত, কাইমুল হক রিংকু, শহীদুল হক স্বপন, মাহবুবুল হক খন্দকার, আবদুল মোতালেব মজুমদার প্রমুখ। উলেস্নখ্য, এ ঘটনায় ২০১৫ সালে পুলিশের দায়ের করা বাসের ৮ যাত্রী হত্যা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার বেগম খালেদা জিয়া ও মনিরুল হক চৌধুরীসহ আসামিদের কুমিলস্নার আদালতে হাজিরার তারিখ নির্ধারণ ছিল। আদালত এ মামলার তারিখ পিছিয়ে দিয়েছেন।