গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, তীব্র যানজট
প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
বেতন-বোনাস পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে আবারও গাজীপুর সদরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। রোববার সকালে গাজীপুরের একটি ও কালিয়াকৈরে তিনটি কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। শ্রমিক বিক্ষোভে উভয় মহাসড়কের দুই পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। কালিয়াকৈরে বিক্ষোভ চলাকালে কারখানা ভাঙচুরেরও ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিকে, একই দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গীতে কর্মবিরতি পালন করেন একটি ওষুধ ও তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। রোববার সকালে কারখানায় ভেতরই শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় কারখানাগুলোর সার্বিক উৎপাদন কার্যক্রম।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে রোববার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তিনটি কারখানার শ্রমিকরা। এতে ওই মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলে চরম দুর্ভোগে পড়েন পরিবহণ শ্রমিক ও যাত্রীরা। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর চালালে মালিকরা কারখানা কন্ধ করে দেন।
শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিগত দিনে সরকার সারাদেশের শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করলেও কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড কারখানায় তা মানা হয়নি। এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বারবার বৈঠক হলেও কোনো ফল হয়নি। ফলে বিভিন্ন সময় ওই কারখানার শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সকালে কারখানায় গিয়েও কর্মবিরতি শুরু করেন। পরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের ওসি নিতাই চন্দ্র সরকার জানান, সকালে ওই কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ রেখে বিক্ষোভ করেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সরিয়ে দিলে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অন্যদিকে একই দিন উপজেলার হরতকিতলা এলাকায় ইকোনিক্স লিমিটেড নামে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা দুপুরে কাজ বন্ধ করে কয়েকজন কর্মকর্তার অপসারণসহ ১০ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
রোববার সকালে গাজীপুর সদরের বাঘেরবাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন মন্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। সকাল ৮টার পর থেকে কারখানার পাশে মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
শিল্প পুলিশ ও কারখানা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকার মন্ডল গ্রম্নপের মন্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেয়নি। শ্রমিকরা রোববার সকালে কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা কারখানার পাশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘেরবাজার এলাকায় অবরোধ করেন। এতে ঢাকাগামী ও ময়মনসিংহগামী উভয় লেনে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন ওই মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা।
মন্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেড কারখানার শ্রমিক মো. হাসিব বলেন, 'আপনারা খোঁজ নিয়ে দেহেন সব কারখানায় হাজিরা বোনাস বাড়াইছে, কিন্তু আমাদের কারখানায় কোনো হাজিরা বোনাস বাড়াই নাই। অনেক দিন ধইরা আমরা দাবি জানাইতাছি, কিন্তু মালিকের লোকজন আমাদের কথায় হোনবার চায় না। যার কারণে আমরা কাম বন্ধ কইরা আন্দোলনের নামছি।'
একই কথা জানান শ্রমিক কবির হোসেন। তিনি বলেন, 'আমরা বেতন ঠিকমতো পাইলেও হাজিরা বোনাস ঠিকমতো পাই না। তাই আন্দোলনে নামছি।'
অন্যদিকে গাজীপুরের সদর উপজেলার নতুন বাজার এলাকার অ্যাসরোটেক্স লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা নূ্যনতম হাজিরা বোনাস এক হাজার টাকা ও টিফিন বিল বৃদ্ধিসহ গ্রেড অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের আলোচনা চলছে বলে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে।
শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার এসএম আজিজুল হক বলেন, 'দুটি কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে মন্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেডের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। আমরা দুটি কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।'
টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গীতে কর্মবিরতি পালন করছেন একটি ওষুধ ও তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। রোববার সকাল থেকে নিজ নিজ কারখানার ভেতর এই কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এতে বন্ধ হয়ে যায় কারখানাগুলোর সামগ্রিক উৎপাদন কার্যক্রম।
ওই কারখানাগুলো হলো- টঙ্গীর খাঁ পাড়ার সিজন ড্রেসেস লিমিটেড, ২৭ বাগানবাড়ি এলাকার প্রিন্স জ্যাকার্ড লিমিটেড, খাইলকুরের এমএম ফ্যাশন লিমিটেড এবং চেরাগআলীর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। কারখানাগুলোতে কাজ করেন কয়েক হাজার শ্রমিক।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, সিজন ড্রেসেস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বেতন বকেয়া আছে। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এরপর জুলাই মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করে মালিকপক্ষ। বকেয়া বেতনের দাবিতে ১৮ সেপ্টেম্বর থকে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সকাল থেকেও কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা।
একইভাবে আগস্ট মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিডেট ও এমএম ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকদের। বেতনের দাবিতে কয়েকদিন ধরেই কারখানা দুটিতে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। রোববার সকালে তারা কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।
শনিবার ছয় দফা দাবিতে কারখানার সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শ্রমিকরা। সেদিন কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা কাজে ফেরেন। কিন্তু এরপরও সেসব দাবি পূরণ হয়নি জানিয়ে রোববার থেকে আবারও দেখা দেয় অসন্তোষ। ফলে এদিন ফের কর্মবিরতি পালন করেন তারা।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের টঙ্গী জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন বলেন, 'কারখানার মালিকরা সময়মতো বা ঠিকমতো বেতন পরিশোধ না করায় পোশাক শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। পাশাপাশি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সমস্যা আগে থেকেই। সব দাবি না মানায় আবার শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। চারটি কারখানার শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত রাখার চেষ্টা করছি, যেন সড়ক অবরোধ বা কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা না করেন।