বিশাল লক্ষ্যে খেলতে নেমে ওপেনারদের ভালো শুরুর পর আগের দিন অর্থাৎ বুধবার বিকালে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল সফরকারী বাংলাদেশ দল। তাইতো চতুর্থ দিনে আশা ছিল একটু লড়াইয়ের। বৃহস্পতিবার সকালে নেমে সেই লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিলেন টাইগার দলপতি নাজমুল হোসেন শান্ত ও দেশসেরা বাঁহাতি স্পিন-অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
তবে প্রথম ঘণ্টার পর বল হাতে নিয়েই সব হিসাব-নিকাষ এলোমেলো করে দেন ভারতীয় অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সেই সঙ্গে ধারাল উঠলেন আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা। বাংলাদেশ দল আর পায়নি খুঁজে দিশা। রোববার চেন্নাই টেস্টের চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই হয়ে গেছে প্রথম টেস্ট ম্যাচের ফয়সালা। বাংলাদেশকে ২৮০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে স্বাগতিক ভারত। দুই টেস্ট সিরিজে রোহিত শর্মার দল এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে।
ম্যাচের চতুর্থ দিনে রোববার লাঞ্চের আগেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৪০ রানের মধ্যেই শেষ ৬টি উইকেট হারিয়ে তাদের ইনিংস শেষ হয় ২৩৪ রানে। রানের হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের সবচেয়ে বড় জয় এটি। এ ছাড়া ইনিংস ব্যবধানের জয় আছে পাঁচটি। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা রবিচন্দ্রন অশ্বিন জ্বলে ওঠেন নিজের আসল কাজেও। বল হাতে তার শিকার ৬ উইকেট। ম্যাচসেরার স্বীকৃতি পান তিনিই।
যে দুর্দান্ত বাংলাদেশকে পাকিস্তানের বিপক্ষে দেখা গেছে, ভারতের বিপক্ষে সেই বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া গেল না। পাকিস্তান থেকে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে আসা টাইগাররা ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্টে রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়ল। বাংলাদেশকে ২৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে ভারত। এই জয়ের ফলে নতুন রেকর্ড তৈরি করল তারা। ৯২ বছরে প্রথমবার পরাজিত ম্যাচের থেকে জয়ী ম্যাচের সংখ্যা বেশি ভারতের।
এখন পর্যন্ত নিজেদের ইতিহাসে মোট ৫৮০টি টেস্ট খেলেছে ভারত। যার মধ্যে হার ১৭৮টি, ্র ২২২ ম্যাচ, পরিত্যক্ত ১টি। বাংলাদেশের বিপক্ষে নামার আগে টেস্টে ভারতের জয়ও ছিল হারের সমান ১৭৮টি। বাংলাদেশকে হারিয়ে টেস্টে এখন ১৭৯ জয়ের মালিক হয়েছে ভারত। ফলে এখন হারের চেয়ে (১৭৮ হার) জয়ের সংখ্যায় এগিয়ে গেছে ম্যান ইন বস্নুরা।
যদিও এই কৃতিত্ব আগেই অর্জন করেছিল অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার ভারতও সেই দলে ঢুকে পড়ল। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, শ্রীলংকা এবং আয়ারল্যান্ড টেস্টে এই নজির গড়তে পারেনি।
৫১৫ রানের রেকর্ড লক্ষ্যে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ২৩৪ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮২ রান করেন অধিনায়ক শান্ত। প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকলেও ৮৮ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন। এর আগে ব্যাট হাতে দলের নায়ক তিনি। প্রথম ইনিংসে প্রবল চাপে খেলেন ১১৩ রানের ইনিংস। নিশ্চিতভাবেই ম্যাচ সেরা এই অলরাউন্ডার। ৫৮ রানে ৩ উইকেট নেন জাদেজা। প্রথম ইনিংসে ১৯ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে অশ্বিনের সঙ্গে ১৯৯ রানের জুটির পথে ৮৬ করে ভূমিকা রাখেন বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার।
আগের দিনের ৪ উইকেটে ১৫৮ রান নিয়ে নেমে চোঁয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা দেখাচ্ছিলেন সাকিব-শান্ত। রান তোলার গতি মন্থর থাকলেও টিকে থাকতে পারছিলেন তারা। জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজের দারুণ ডেলিভারিগুলো সামাল দিয়ে ফেলেছিলেন দুজন।
পেসারদের দিয়ে শুরুতে উইকেট নেওয়ার চেষ্টা চালালেও তাতে সফল না হওয়ায় স্পিনারদের শরণ নেন রোহিত শর্মা। জাদেজা আসতেই নড়বড়ে দেখায় বাংলাদেশের ব্যাটারদের।
সাকিব জাদেজার বলে পরাস্ত হয়ে স্টাম্পিংয়ের সুযোগও দেন। ঋষভ পান্তের ব্যর্থতায় ১৭ রানে বেঁচে যান তিনি। তবে আর কেবল ৭ রান যোগ করা হয় তার। প্রথম ঘণ্টার পর অশ্বিন এসেই ছাঁটেন তাকে। অশ্বিনের বল ঠেকাতে গিয়ে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের সফলতম ক্রিকেটার। লিটন কুমার দাস নেমেই হাঁসফাঁস করতে থাকেন। জাদেজার বল যেন দুর্বোধ্য ঠেকে তার কাছে। একাধিকবার সুইপের চেষ্টায় গিয়ে ব্যর্থ হন। পরে জাদেজার বলেই স্স্নিপে দেন সহজ ক্যাচ, ফেরেন ১ রান করে।
নাজমুল হোসেন শান্ত তখন আরেক প্রান্তে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তার সঙ্গে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দারুণ সময় পার করতে থাকা এই অলরাউন্ডার এবার আর দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। অশ্বিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে সহজ ক্যাচ।
শান্ত টিকে থেকে সেঞ্চুরির আভাস দিচ্ছিলেন, তবে তাকে আর সাবলীল মনে হচ্ছিল না।
৮২ রানে একবার জীবন দিয়েও রক্ষা পাননি। জাদেজার বল এলোপাতাড়ি তুলে ফেরেন ওই ৮২ রানেই। তাসকিন ক্রিজে এসে টেকেন ৪ বল। তিনিও অশ্বিনের বলেই ক্যাচ দিয়ে হাঁটা ধরেন। শেষ উইকেট নিয়ে জাদেজা শেষ করে দেন চেন্নাইতে শুরু হওয়া সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ। কানপুরে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি শুরু হবে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস: ৩৭৬
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৪৯
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস: ২৮৭/৪ (ডি.)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৫১৫) ৬২.১ ওভারে ২৩৪ (জাকির ৩৩, সাদমান ৩৫, শান্ত ৮২, মুমিনুল ১৩, মুশফিক ১৩, সাকিব ২৫, মিরাজ ৮, তাসকিন ৫, হাসান ৭, নাহিদ ০*; বুমরাহ ১/২৪, সিরাজ ০/৩২, আকাশ ০/২০, অশ্বিন ৬/৮৮, জাদেজা ৩/৫৮)
ফল: ভারত ২৮০ রানে জয়ী
সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজে ভারত ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রবিচন্দ্রন অশ্বিন।