চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে গত শুক্রবার টার্ফের দখল নিয়ে সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব উদ্দিন।
ওসি জানান, শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে ৪০ জনের নাম উলেস্নখ করে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন সংঘর্ষে নিহত জুবায়ের উদ্দিন বাবুর দুলাভাই নাজিম উদ্দিন।
মামলার আসামিরা হলেন- নুরুল আমিন, জাশেদুর রহমান নওশাদ, মো. আলফাজ, আবির রহমান রুবেল, ফয়সাল মোরশেদ, মো. ফাহিম, মো. জাহেদ, মো. নয়ন, মো. হাছান
ওরফে ঢাকাইয়া হাছান, মো. পারভেজ, জয়নাল আবেদিন সাকিব, মো. নাজিম, মো. হাকিম, মো. আমজাদ, মো. সালাউদ্দিন, মুনতাছির মাহিন, কুতুব উদ্দিন জাহেদ, আরিফ মঈনুদ্দিন, মো. সোহান, মো. ফাহিম, মো. খোকন, মো. সাকিব, রনি, সাইমন, আবছার, রিয়াদ, খলিল, জুয়েল, সোহেল, রিয়াদ, খোকন, আবছার, আলী খাঁন লিটন, নেজাম উদ্দিন, মহিউদ্দিন বাবু, ইরফান, মিরাজ, তারেক, মুরসালিন এবং ফারুক। তারা সকলেই চান্দগাঁও থানা এলাকার বাসিন্দা।
মামলার এজাহারে উলেস্নখ করা হয়, বাদীর শ্যালক জুবায়ের উদ্দিন বাবু গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় চান্দগাঁও থানার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসের পাশেই চান্দগাঁও স্পোর্টস জোন নামে একটি টার্ফ উদ্বোধনে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে খেলার আগমুহূর্তে আসামিরা পুর্বশত্রম্নতার জের ধরে দেশি অস্ত্রশস্ত্রসহ টার্ফের মালিকপক্ষ, আয়োজক কমিটি ও দর্শকদের ওপর হামলা করে। এ সময় টার্ফের ভেতরে থাকা বাদীর শ্যালক জুবায়ের উদ্দিন বাবুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, 'শুক্রবার টার্ফ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে জুবায়ের উদ্দিন বাবু নামে এক যুবক ছুরিকাঘাতে খুনের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ৪০ জনের নাম উলেস্নখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই অভিযান চালিয়ে নিজাম উদ্দিন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়ছে। তাকে শনিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার নিজাম ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টার্ফের দখল নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. আমিনের অনুসারীরা ওইদিন সংঘর্ষে জড়ান।
সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের ভাষ্য, মোশাররফ হোসাইন টার্ফটি ইজারা নিয়েছেন বলে দাবি তার পক্ষের লোকজনের। তবে নুরুল আমিন গ্রম্নপের লোকজন টার্ফটি দখল নিতে চেয়েছেন। এর সূত্র ধরেই সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। এতে একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি মোশাররফের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে মোশারফ সাংবাদিকদের বলেন, 'স্থানীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা নওশাদ আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তারা শতাধিক লোকজন নিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। এ সময় আমাদের দলের কর্মী বাবু নিহত হয়। আমি এই ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নেব। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমি।'
এদিকে, দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহতের পর নগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ওই দুই নেতাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলীয় সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শনিবার জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় জাতীয়তাবাদী যুবদল চট্টগ্রাম মহানগর শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। শিগগিরই উক্ত ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসাইন এবং কৃষিবিষয়ক সম্পাদক নুরুল আমিনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলীয় সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো। এছাড়া জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
গত ১৫ জুন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে নির্মিত টার্ফটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫ দশমিক ২২ কাঠা জায়গায় নির্মিত এ আধুনিক স্পোর্টস কমপেস্নক্সে রয়েছে ছোট পরিসরে ফুটবল খেলার একটা টার্ফ, বেডমিন্টন কোট, সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য একটি প্রশস্ত ওয়াকওয়ে। খেলোয়াড়দের জন্য রয়েছে ড্রেসিং রুম এবং ওয়াশ বস্নক। আছে শিশুদের খেলাধুলার জন্য চাইল্ড জোন। এখানে সময় কাটানোর জন্য তৈরি করা হচ্ছে একটি নান্দনিক মুক্তমঞ্চ।