রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

কক্সবাজারে গ্রাম-শহরে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ

জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কক্সবাজারে গ্রাম-শহরে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ

কক্সবাজারে বর্ষার শেষেও গাণিতিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ইতোমধ্যে জেলায় ৬ হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী বাড়ায় জেলাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। এ অবস্থায় স্থানীয়রা এডিস মশা নিধনের দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে ডেঙ্গুতে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, কক্সবাজার শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ উচ্চহারে বাড়ছে। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ডেঙ্গু নির্মূল করতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যেহেতু ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো প্রতিষেধক বা টিকা নেই, তাই সুরক্ষিত থাকার একমাত্র পন্থা হলো মশার কামড় থেকে নিজেকে সুরক্ষা রাখা। ডেঙ্গু কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। ডেঙ্গু রোগীকে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশার হাত থেকে বাঁচতে কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের ডেঙ্গু সেলের দায়িত্বরত চিকিৎসক শাহ ফাহিম আহমদ ফয়সাল জানান, গত মাস থেকে কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কক্সবাজারে গত জুন থেকে এ পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫৮৫ এবং স্থানীয় রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৭৮৫ জন। এ পর্যন্ত ৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। মারা যাওয়া সবাই রোহিঙ্গা। চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ১৫ শতাংশ বেড়েছে বলেও জানান তিনি।

সরেজমিন দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার কারণে জেলা সদর হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা। হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে শয্যার বিপরীতে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় রোগীদের ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে। এখানে ডেঙ্গু আক্রান্তের বেশিরভাগ রোগীকে মশারি ছাড়াই থাকতে দেখা গেছে। হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে রক্তের নমুনা দিতে কেন্দ্রের সামনে লম্বা লাইন। স্বল্প খরচে সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা সেবা পাওয়ায় বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রোগীর স্বজনরা।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু বিভাগে দায়িত্বে থাকা মো. সেলিম জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সদর হাসপাতালে নতুন করে ৭৮ জন (৪৩ পুরুষ, ৩৫ জন নারী) ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর ৬৮ জন (৩৩ জন পুরুষ, ৩৫ জন নারী) আক্রান্ত রোগী ভর্তি। এ ছাড়া গত জুলাই মাসে ৩১৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে রোহিঙ্গারাও রয়েছেন। আগস্টে ৯৯৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ

অসচেতনতা। পৌরসভার সমিতিপারা, পাহাড়তলী, পেশকারপাড়া, বড়বাজার, বাজারঘাটা, বৈদ্যঘোনা, ঘোনাপাড়া, টেকপাড়া, আলীরজাহাল, নতুন বাহারছড়া, রুমানিয়ারছড়া, ঝাউতলা, এসব এলাকাসহ জেলায় বিভিন্ন স্থানে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, এলাকায় ঝোপঝাড়, বাড়ির আঙিনা, ড্রেন বা নালাসহ, বাড়ির আশপাশে যেখানে ময়লা সড়কের পাশে নালা-নর্দমা সংস্কার না করাই জমে থাকা পানিতে এডিশ মশা বিস্তার ঘটছে।

শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা সুলতান আহম্মদ জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত স্ত্রীকে নিয়ে তিনি চারদিন আছেন হাসপাতালে। তার স্ত্রী জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রথমে তাকে বাইরে পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি করান। এখান থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ সবকিছু ঠিকভাবেই পাচ্ছেন। তার স্ত্রী এখন আগের থেকে সুস্থ।

সমিতিপাড়া বাসিন্দা রেহেনা আকতার বলেন, 'শহরে যেখানে-সেখানে রাখা ময়লা-আবর্জনার স্তূপের কারণে নালা-নর্দমা ভরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মশার প্রজনন। এসব যেন দেখার কেউ নেই।'

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. আশিকুর রহমান বলেন, 'জেলায় আগের তুলনায় ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিনই নতুন রোগী আসছে। রোগীর চাপ বাড়ায় সেবা দিতে কিছুট সমস্যা হচ্ছে। তবে আমাদের চিকিৎসক ও নার্সদের মনোবল ভাঙেনি। তাদের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় সবাইকে সেবা দিয়ে চলেছি।'

কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডাক্তার আসিফ আহমেদ হাওলাদার জানান, এ সময়টা ডেঙ্গুর মৌসুম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। অতিরিক্ত রোগী থাকায় সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তবে রোগীদের জন্য সদর হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে