জাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল
শামীম মোলস্নাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা
প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোলস্নাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে। হত্যা মামলাটিতে আটজনের নাম উলেস্নখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করেছে আশুলিয়া থানা-পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার সুদীপ্ত শাহীন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের আহসান লাবিব, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের রাজু আহাম্মদ, ইংরেজি বিভাগের ৫০তম ব্যাচের মাহমুদুল হাসান রায়হান, ইতিহাস বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের জুবায়ের আহমেদ, ইংরেজি বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের হামিদুলস্নাহ সালমান, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের মো. আতিকুজ্জামান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সোহাগ মিয়া, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাজন মিয়ার নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। শামীম হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ওই আট শিক্ষার্থীকে গতকাল সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাবীবুন নবী নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত বুধবার বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে শামীম মোলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক ফটকে এলে কয়েকজন ব্যক্তি তাকে মারধর করেন। খবর পেয়ে প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রক্টরের কার্যালয়ে নিয়ে যান। আহত শামীমকে প্রক্টর কার্যালয়ের একটি কক্ষে রেখে প্রক্টর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আশুলিয়া থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। এর মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি প্রক্টরিয়াল টিমকে না জানিয়ে জোর করে শামীম মোলস্নাকে প্রক্টর কার্যালয়ের পাশে নিরাপত্তা কার্যালয়ে নিয়ে যান। প্রক্টর বিষয়টি জানতে পেরে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে নিরাপত্তা কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেন। পরে সেখানে নিরাপত্তাকর্মীদের পাহারায় রেখে প্রক্টরের কার্যালয়ে ফিরে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর মধ্যে আবার কয়েকজন উত্তেজিত হয়ে নিরাপত্তা কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে শামীম মোলস্নাকে আবারও মারধর করেন।
এজাহারে বলা হয়, পরে প্রক্টরিয়াল টিম ও নিরাপত্তা শাখা কর্মকর্তারা শামীম মোলস্নার সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের থামান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পুলিশ সদস্যরা এসে জানান, শামীমের নামে একাধিক মামলা আছে। রাত ৮টায় শামীমকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। আশুলিয়া থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে শামীমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। উলিস্নখিত ঘটনায় আহসান লাবিব, রাজু আহাম্মদ, মাহমুদুল হাসান রায়হান, জুবায়ের আহমেদ, হামিদুলস্নাহ সালমান, মো. আতিকুজ্জামান, সোহাগ মিয়া, মোহাম্মদ রাজন মিয়াসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২০-২৫ জন সম্পৃক্ত ছিলেন।
মামলা ও এক ব্যক্তিকে আটকের বিষয় নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বকর সিদ্দিক। তিনি জানান, এ ঘটনায় একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল রাত ৩টার দিকে ধামরাই পৌরসভা এলাকা থেকে থানায় আনা হয়েছে।
এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে সব ধরনের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ দাবিতে একটি বিক্ষোভ-মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে অমর একুশে, টার্জান হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে স্স্নোগান দিতে থাকেন। এ সময় উপাচার্য বাসভবনের বাইরে এলে শিক্ষার্থীরা তার কাছে তিন দফা দাবি জানান। উপাচার্যের কাছে লিখিত দেওয়া এই দাবি হলো- সব ধরনের দলীয় ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তা রাজনীতি আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচন দিতে হবে। গত ১৪ থেকে ১৭ জুলাই ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী এবং মদদদাতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় আইনে বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে মামলা করতে হবে ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল বলেন, 'আমরা একটি সমতার সমাজ গঠনের জন্যই আন্দোলন করেছি। আমাদের এ রক্ত যেন বৃথা না যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীই চায় দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। আশা করি উপাচার্য আমাদের দাবির পক্ষে সিদ্ধান্ত দেবেন।'
উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান বলেন, 'যেহেতু এতোদিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ প্রশাসন কাঠামো ছিল না, তাই আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তাই আগামী রোববার আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা জরুরি মিটিং ডেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।' উপাচার্যের আশ্বস্তে এসময় শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল সমাপ্ত ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে রোববারে শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে সিদ্ধান্ত না এলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।